গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্তে নতুন মোড় এসেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলছে, দীর্ঘ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ছাড়াও অন্তত চার দেশের নাগরিকের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। মামলার চার্জশিটের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, যা শিগগিরই আদালতে দাখিল করা হবে।
সিআইডির একটি সূত্র জানায়, অভিযুক্তদের মধ্যে শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক রয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তাদের গুরুতর গাফিলতি ও প্রত্যক্ষ–পরোক্ষ সম্পৃক্ততারও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক হ্যাকার চক্র উন্নত ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে এ চুরি সংঘটিত করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগ সচেতনভাবেই ওই ফাইলটি খোলে, যার ফলে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার অবৈধভাবে স্থানান্তরিত হয়। চার্জশিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন যুক্ত করা হবে, যেখানে বিদেশি নাগরিকদের সম্পৃক্ততার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতের ওই সাইবার হামলাকে বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থ চুরির ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হ্যাকাররা প্রায় একশ কোটি ডলার স্থানান্তরের চেষ্টা করলেও সফল হয় ১০১ মিলিয়ন ডলার সরাতে। এর মধ্যে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইন এবং ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কায় যায়। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হলেও ফিলিপাইন থেকে অর্থ উদ্ধারে জটিলতা দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৮ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার হয়েছে।
ঘটনার তদন্তে সিআইডির পাশাপাশি এফবিআই, ফিলিপাইনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এনবিআই) এবং শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে। জাতিসংঘকেও পরবর্তীতে পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
ঘটনার ৩৯ দিন পর, ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব ও বাজেট বিভাগের তৎকালীন উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তর হয়।
প্রায় নয় বছর ধরে শতাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি, নেটওয়ার্ক লগ, ব্যাংক লেনদেন ও ড্রিডেক্স ম্যালওয়্যারসহ নানা প্রযুক্তিগত প্রমাণ খতিয়ে দেখা হয়েছে। এতে হামলায় জড়িত দেশি-বিদেশি চক্রকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে সিআইডি জানিয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, চার্জশিট দাখিলের মধ্য দিয়ে এ সাইবার ডাকাতির রহস্য উন্মোচিত হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে সাইবার নিরাপত্তা জোরদারে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।