৪৪৩ বছরের খেরুয়া মসজিদ ধ্বংসের মুখে, অবহেলায় ঝরে পড়ছে ইট

আবু শিহাবুত তালহা, বগুড়া থেকে

বগুড়ার শেরপুরে মুঘল আমলে নির্মিত ৪৪৩ বছরের প্রাচীন খেরুয়া মসজিদ অবহেলার শিকার হয়ে ধীরে ধীরে হারাচ্ছে ঐতিহাসিক সৌন্দর্য। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটির দায়িত্ব নিলেও প্রায় তিন যুগ ধরে কোনো সংস্কার করা হয়নি। ফলে মসজিদের তিনটি গম্বুজ ও বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। বাইরের অংশ তুলনামূলক ভালো থাকলেও ভেতরের ইটগুলো ক্ষয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলেই মসজিদের ভেতরে পানি পড়ে, মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে হয় চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে। স্থানীয়রা পর্যটক বৃদ্ধি ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে দ্রুত সংস্কারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বগুড়া শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং শেরপুর উপজেলা সদর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে শাহবন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকারটোলা এলাকায় অবস্থিত এই ঐতিহাসিক মসজিদ। জনশ্রুতি আছে—মসজিদটি এক রাতের মধ্যে মাটি থেকে উঠে এসেছিল। তবে এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মসজিদের পূর্বপাশে ফার্সি হরফে লেখা একটি শিলালিপিতে উল্লেখ রয়েছে যে, ১৫৮২ সালে নবাব মির্জা মুরাদ খান কাকশালের পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় আবদুস সামাদ ফকিরের তত্ত্বাবধানে খেরুয়া মসজিদ নির্মিত হয়। মসজিদের স্থাপত্যশৈলীতে সুলতানি ও মুঘল রীতি মিশে আছে। মসজিদ প্রাঙ্গণেই আবদুস সামাদ ফকিরের কবর রয়েছে।

প্রায় ৫৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থের এই মসজিদে রয়েছে তিনটি বড় গম্বুজ এবং চার কোণে অষ্টকোণাকৃতি মিনার। পূর্বপাশে তিনটি, উত্তর ও দক্ষিণ পাশে একটি করে মোট পাঁচটি ছোট দরজা রয়েছে। দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ছয় ফুট এবং সম্পূর্ণ মসজিদ ছোট ছোট ইট দিয়ে নির্মিত। মূল দরজার দুই পাশে দুটি ফার্সি শিলালিপি ছিল, যার একটি বর্তমানে পাকিস্তানের করাচি জাদুঘরে সংরক্ষিত। ভেতরে রয়েছে আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে অর্ধ গোলাকার মেহরাব ও বাঁকানো কার্ণিশ। বাইরের দেওয়ালে ফুলের নকশা থাকলেও ভেতরের অংশ বেশ সরল। ছাদের চারপাশে কবুতর ও শালিকের বাসা চোখে পড়ে। প্রায় ৫৯ শতাংশ জায়গাজুড়ে মসজিদ চত্বর জুড়ে রয়েছে ফলজ ও বনজ গাছ। গ্রিল ও ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা মসজিদের প্রধান ফটকের পাশে অস্পষ্ট ইতিহাস লেখা একটি নামফলক দেখা যায়। নামাজের সময় ছাড়া মসজিদে প্রবেশ সীমিত। এখানে তিন কাতারে প্রায় ৯০ জন একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। রমজান মাসে তারাবিহ ও দুই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বারান্দা না থাকায় জুমা বা ওয়াক্তিয়ার সময় বেশি মুসল্লি হলে চত্বরে চট বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে হয়।

স্থানীয়রা জানান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত এই মসজিদ প্রতিদিন ২৫ থেকে ১০০ জন পর্যটক দেখতে আসেন। তবে মসজিদে যাওয়ার রাস্তার অবস্থা নাজুক। বৃষ্টির সময় চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে, তাছাড়া মসজিদের অবস্থান জানাতে কোনো সাইনবোর্ডও নেই।

সর্বশেষ ১৯৮৮ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটি সংস্কার করেছিল। এরপর থেকে আর কোনো সংস্কার হয়নি। প্রায় ৩৭ বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর স্থানীয় আবদুস সামাদ নামের এক ব্যক্তিকে সাইট পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ দিলেও তাতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *