১৫ আগস্টের নীরবতা-নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক বার্তা

১৫ আগস্ট, ২০২৫—দেশজুড়ে এ দিন পালিত হলো দুই ভিন্ন আবহে। একদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস, অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘোষিত জন্মদিন। কিন্তু আগের বছরের তুলনায় এবার আয়োজন ছিল অনেকটাই সীমিত।

অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে জাতীয় শোক দিবসে কোনো সরকারি ছুটি রাখা হয়নি এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয়ভাবে বড় অনুষ্ঠান হয়নি। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনে সকালে কয়েকটি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন শ্রদ্ধা জানালেও অংশগ্রহণ ছিল সীমিত, আর নিরাপত্তার কারণে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকেও জন্মদিন উদযাপন ছিল নীরব। দলীয় কার্যালয়ে কেক কাটা ও মিলাদ মাহফিল ছাড়া বড় কোনো সমাবেশ বা শোভাযাত্রা হয়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নীরবতার পেছনে রয়েছে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং সরকারের নীতি পরিবর্তন। তবে তরুণ প্রজন্মের প্রতিক্রিয়া আরও ভিন্ন এক বাস্তবতার ইঙ্গিত দেয়—তাদের মতে, অতীতের প্রতীকী রাজনীতির চেয়ে বর্তমান সমস্যার সমাধান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

তরুণদের অগ্রাধিকারের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সুশাসন ও জবাবদিহি—ক্ষমতার অপব্যবহারে শূন্য সহনশীলতা, দুর্নীতি দমন, ঘুষ-চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট ভাঙা। তারা মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা, মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাকে সময়ের দাবি মনে করে। অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরির মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিকে তারা দেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে।

বিভাজনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে ইতিহাসকে সম্মান জানিয়ে দেশ গড়ার কাজে মনোযোগী হতে চায় এই প্রজন্ম। তাদের কাছে রাজনীতি মানে জনগণকেন্দ্রিক উদ্যোগ, যা নাগরিক সমস্যার সমাধান করবে এবং সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

এই ১৫ আগস্টের নীরবতা হয়তো তাই শুধু রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিচ্ছবি নয়—বরং একটি প্রজন্মের পরিবর্তিত মনোভাবেরও ইঙ্গিত।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *