গণমঞ্চ ডেস্ক নিউজ
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবিধান কায়েম থাকা অবস্থায় নির্বাচন হলে সবাই রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে পরিচিত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার।
শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনকেন্দ্রিক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফরহাদ মাজহার বলেছেন, অভ্যুথানের তরুণ নেতারা এখনো শেখ হাসিনার ভূত বয়ে বেড়াচ্ছে। সংবিধান পরিবর্তন না করে নির্বাচন দিলে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রদের দেশদ্রোহী বলে বিবেচনা করা হতে পারে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ছিল বিশ্ব ইতিহাসের একটি বিরল ঘটনা, যা একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটিয়ে দিয়েছিল। অথচ এর পরের পদক্ষেপ হিসেবে তরুণদের পক্ষ থেকে কোনো গঠনমূলক সাংবিধানিক উদ্যোগ দেখা যায়নি। ৮ আগস্ট আবারও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সংবিধানের অধীন রাষ্ট্র কায়েম হয়ে গেল, কিন্তু তরুণদের মধ্যে কোনো প্রতিরোধের চেতনা দেখা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পাঁচ তারিখে একটা গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছি। এটা একটা বৈশ্বিক ঘটনা। নিউ লিবারাল ইকোনমি পলিসি সারা পৃথিবীর কোথাও এভাবে সরকার উৎখাত হয়নি। ফরাসি বিপ্লবের পরে খুব তাৎপর্যপূর্ণ একটা ঘটনা এটা। কিন্তু কেন তরুণ ছাত্ররা এ ব্যাপারে সচেতন না, উপলব্ধি করতে পারছে না—এটা এখনো শুধু তাদের আবেগের বিষয়।’
ফরহাদ মজহার বলেন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান আমাদেরকে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঢুকিয়ে দিয়েছে, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে শিক্ষার কিছু নেই। তরুণরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শেখেনি গণঅভ্যুত্থান কাকে বলে।
ফরহাদ মজহার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কেন আমরা দেখি নেই যে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বা শহীদ মিনারে তরুণরা দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছে—আজ থেকে আমরা দেশে ক্ষমতা গ্রহণ করলাম? কেন এই হিম্মত আসেনি? এত বড় ঘটনা ঘটার পরও তরুণদের মধ্যে আত্মসমালোচনা নেই। যদি শেখ হাসিনার এই ফ্যাসিস্ট সংবিধান কায়েম থাকে এবং সেনা সমর্থিত অবৈধ উপদেষ্টা সরকার নির্বাচন করে, তবে প্রত্যেকেই রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলবে। কিন্তু ছাত্রনেতাদের মধ্যে এই সামান্য উপলব্ধিও নেই।’
তিনি বলেন, ‘৬৯ এ আমরা দেখেছি, পুলিশ ঢাবিতে প্রবেশ করতে পারেনি। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাধীন ছিল। তখন শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাহিনী। বাইরের কোনো শক্তির হস্তক্ষেপের অধিকার ছিল না। অথচ এখন যে কেউ প্রবেশ করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা আজ বিলুপ্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ছিল গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্বমানের। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে সত্যেন বোস, আইনস্টাইনের ফর্মুলা সংশোধন করেছিলেন। ইতিহাস বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ ছিল বিশ্ববিখ্যাত। অথচ আজ ছাত্ররা পলিটিক্যাল ইকোনমির পরিবর্তে এমবিএ করছে। এমবিএ মানে কোম্পানির কাছে নিজেকে বিক্রি করা।’
তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে গণঅভ্যুত্থান করেছি। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হয়ে অংশগ্রহণ করিনি। তাই সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব মোকাবিলায় বাম, ডান, ইসলামপন্থী—সব মতের তরুণদের একত্র হতে হবে।’
সভায় ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আরমানুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খাইরুল আহসান মারজান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের মোজাম্মেল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।