গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, হাসানুল হক ইনুসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীর দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য দিয়েছেন। গতকাল সোমবার হাসানুল হক ইনুকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ওপর শুনানির জন্য প্রসিকিউশন এক সপ্তাহ সময় প্রার্থনা করে। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী নাজনীন নাহার আরো দুদিন সময় চেয়ে আবেদন জানান। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৪ অক্টোবর শুনানির নতুন তারিখ ধার্য করে।
গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ায় ৬ জনকে হত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় হাসানুল হক ইনুকে একমাত্র আসামি করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ৩৯ পৃষ্ঠার ওই অভিযোগে ইনুর বিরুদ্ধে মোট ৮টি অভিযোগ আনা হয়। এতে ২০ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। অভিযোগপত্রটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গ্রহণ করেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ। অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে অভিযোগগুলো উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য— ১৮ জুলাই ভারতের মুম্বাইভিত্তিক গণমাধ্যম মিরর নাউ-এ ইনু আন্দোলনকারীদের বিএনপি-জামায়াত, সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক ট্যাগ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের উসকানি দেন। প্রসিকিউশনের দাবি—হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের উসকানির মূল উৎস ছিল ইনুর মাথা। ১৯ জুলাই গণভবনে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলীয় জোটের সভায় সেনা মোতায়েন, দেখামাত্র গুলি, আন্দোলনকারীদের দমনসহ কঠোর পদক্ষেপে ইনু সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০ জুলাই তিনি কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে ফোন করে আন্দোলনকারীদের ছবি দেখে তালিকা প্রণয়ন ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি, ছত্রীসেনা নামানোসহ নানা ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করে শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দেন।
২৭ জুলাই নিউজ টোয়েন্টিফোর-এ উসকানিমূলক বক্তব্য দেন এবং কারফিউ ও গুলি চালানোর মতো হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার পক্ষে মত দেন। ২৯ জুলাই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় সভায় জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেন এবং আন্দোলনকারীদের দমনকে রাজনৈতিক বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ৪ আগস্ট শেখ হাসিনার গৃহীত গুলিবর্ষণ ও কারফিউ জারির পদক্ষেপ অনুমোদন করেন।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা, ইনু ও মাহবুবউল আলম হানিফের পরিকল্পনা ও নির্দেশে আওয়ামী লীগ, অঙ্গসংগঠনের কর্মী এবং পুলিশ কুষ্টিয়ায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। এতে ৬ জন নিহত হন— আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী (বাবু), আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, মো. উসামা, বাবলু ফরাজী, ইউসুফ শেখ। গত বছরের ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আটক আছেন।