মাওঃ শামীম হুসাইন কেরানীগঞ্জ থেকে
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যার আদর্শিক দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাচরণে। তাঁর প্রতিটি কাজ ও অভ্যাস মুসলমানদের জন্য পথনির্দেশক, যা সুন্নত নামে পরিচিত। সুন্নত শুধু ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তা এক উৎকৃষ্ট জীবনদর্শন। আধুনিক যুগের ব্যস্ততা, মানসিক চাপ ও জটিলতার মাঝেও সুন্নত মেনে চলা মানুষের জন্য হতে পারে শান্তি ও সফলতার দিশারী।
স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতায় সুন্নতের শিক্ষা
নবী করীম (সা.) দাঁত পরিষ্কারে মিসওয়াক ব্যবহার করতেন, খাওয়ার আগে-পরে হাত ধুতেন এবং পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করতেন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস স্বাস্থ্য রক্ষা ও রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিকিৎসক বলেন, “আমরা যদি প্রফেটিক হাইজিন অনুসরণ করি তবে অনেক রোগ স্বাভাবিকভাবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
খাদ্যাভ্যাসে সংযম
প্রিয় নবী (সা.) অতিভোজন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন: “মানুষ পেটের চেয়ে ক্ষতিকর কোনো পাত্র পূর্ণ করে না।” (তিরমিজি) আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও বলছে, অতিভোজন ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদরোগের অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্নত অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে জীবনযাত্রা আরও স্বাস্থ্যকর হতে পারে।
সামাজিক জীবনে সুন্নতের গুরুত্ব
সুন্নতের আরেকটি বড় শিক্ষা হলো প্রতিবেশীর হক আদায়, অভাবীদের সহায়তা এবং সবার সঙ্গে সদাচরণ করা। ইসলামিক গবেষক ড. মাহবুবুল হক বলেন, “বর্তমান সমাজে যদি সহমর্মিতা ও নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে চাই, তবে রাসূল (সা.)-এর সুন্নতকে নতুন করে জীবনে ধারণ করতে হবে।”
মানসিক প্রশান্তির উপায়
আধুনিক ব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। রাসূল (সা.) আল্লাহর জিকির, সালাত ও দু’আর মাধ্যমে প্রশান্তি অর্জনের পথ দেখিয়েছেন। গবেষণায়ও দেখা গেছে, নিয়মিত প্রার্থনা ও ধ্যান মানসিক চাপ কমায় এবং ইতিবাচক শক্তি জোগায়।
কর্মজীবনে সুন্নতের প্রাসঙ্গিকতা
সততা, বিশ্বস্ততা ও দায়িত্বশীলতা ছিল প্রিয় নবীর (সা.) জীবনের মূল ভিত্তি। কর্মক্ষেত্রে এই মূল্যবোধগুলো গ্রহণ করলে ব্যক্তি সহজেই সহকর্মী ও সমাজের আস্থা অর্জন করতে পারে। ইসলামী অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে সুন্নত অনুসরণ করলে অনিয়ম ও দুর্নীতি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসতে পারে।
সুন্নত কোনো ইতিহাসের অংশ নয়, বরং আধুনিক জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে এক বাস্তব দিশা। স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক সম্পর্ক কিংবা মানসিক প্রশান্তি—সব ক্ষেত্রেই সুন্নত আমাদের জীবনকে সুন্দর ও সহজ করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ব্যক্তি ও সমাজ সুন্নতকে বাস্তব জীবনে অনুসরণ করে, তবে বর্তমানের নানা সংকট অতিক্রম করে শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।