গণমঞ্চ ডেস্ক
সিন্ধু ওয়াটারস চুক্তি ইস্যুতে পাকিস্তানের পক্ষে রায় দিয়েছে নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক স্থায়ী সালিশি আদালত (পিসিএ)। আদালত বলেছে, ভারতকে পশ্চিমাঞ্চলের তিন নদী সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাবের পানি পাকিস্তানের জন্য ‘বাধাহীনভাবে’ প্রবাহিত রাখতে হবে। চুক্তির শর্তের বাইরে গিয়ে কোনো বাঁধ বা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনও করা যাবে না। গত ৮ আগস্ট এ রায় দেন আদালত। পাকিস্তান রায়কে স্বাগত জানালেও ভারত এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। খবর টিআরটি ওয়ার্ল্ড
সোমবার (১১ আগস্ট) পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে রায়কে স্বাগত জানিয়ে জানিয়েছে, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে চুক্তির নির্দিষ্ট শর্ত কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
চলতি বছরের এপ্রিলে কাশ্মীরের পাহালগামে হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করে। পাকিস্তান তা ‘যুদ্ধ ঘোষণার’ সমান বলে প্রত্যাখ্যান করে। মে মাসে দুই দেশের মধ্যে চারদিনের সীমান্ত সংঘর্ষের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।
আদালত বলেছে, সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাব নদীর উপনদীতে ভারতের অনুমোদিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোকে চুক্তির শর্ত মেনে নকশা ও পরিচালনা করতে হবে।
পাকিস্তান বলছে, ভারতের বাঁধ প্রকল্পগুলো সিন্ধু নদীর প্রবাহ কমিয়ে দেবে, যা পাকিস্তানের সেচের জন্য ব্যবহৃত কৃষি জমির ৮০ শতাংশের ওপর নির্ভরশীল।
সিন্ধু পানি চুক্তি কী
ভারতের উজান থেকে পাকিস্তানের সিন্ধু অববাহিকায় প্রবাহিত নদীগুলোর পানি ব্যবহার নিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের।
সিন্ধু পানি চুক্তি অনুসরণ করেই এসব নদীর পানি ব্যবহার করা হয়। ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় এ চুক্তি হয় এবং ভারত ও পাকিস্তান তাতে স্বাক্ষর করে।
চুক্তিটির মাধ্যমে সিন্ধু ও এর উপনদীগুলোর পানিকে দুই দেশের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয় এবং পানিবণ্টনের নিয়ম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সিন্ধু অববাহিকার পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি নদী ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রুর পানি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয় ভারতকে। আর পাকিস্তানকে পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি নদ-নদী সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাবের অধিকাংশ পানি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
চুক্তিটি কোনো দেশ একতরফাভাবে স্থগিত বা বাতিল করার বিধান নেই। বরং এতে সুস্পষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
সিন্ধু, ঝিলাম এবং চেনাব নদীগুলোর প্রবাহ পাকিস্তানের কৃষি, শহর এবং জ্বালানি ব্যবস্থার মূল। এই মুহূর্তে, পাকিস্তানের জন্য এই পানির কোনো বিকল্প নেই। পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম। এবং এটি প্রায় সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর নিশ্চিত প্রবাহের ওপর নির্ভর করে।