মিয়া সুলেমান, (শিক্ষানবিশ প্রতিনিধি), ময়মনসিংহ
সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ২০২৫ সাল থেকেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আবারও বৃত্তি পরীক্ষা চালু করা হবে। এই সিদ্ধান্তটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ। শিক্ষক সমাজ, বিশেষত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনসমূহ এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
বৃত্তি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁরা বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া দরিদ্র অথচ পরিশ্রমী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এ ধরনের বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি ছিল। এ উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মানসিকতা গড়ে তুলবে এবং শিক্ষায় আরও মনোযোগী হতে উদ্বুদ্ধ করবে। যারা অপেক্ষাকৃত মেধাবী, তারা এই বৃত্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে কিছুটা হলেও আর্থিক সহায়তা পাবে। এটি তাদের অধিকার বলেই বিবেচিত হওয়া উচিত।
বেসরকারি/কেজি স্কুলের প্রতিক্রিয়া ও বাস্তবতা-
বিগত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন কেজি স্কুলের শিক্ষক সংগঠনগুলো এই বৃত্তি পরীক্ষার বিরোধিতা করছে। তারা চায় না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা এমন কোনো সুযোগ পাক যা তাদের শিক্ষা বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক কেজি স্কুল শিক্ষাকে বাণিজ্যে পরিণত করেছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ও মাসিক টিউশন ফি অত্যন্ত বেশি। ধনী ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো চাকচিক্যময় শ্রেণিকক্ষ, সীমিত শিক্ষার্থী, ও অতিরিক্ত কোচিং ক্লাসের কারণে সন্তানদের এসব স্কুলে ভর্তি করান।
কেজি স্কুলে শিক্ষকদের বাস্তব চিত্র হল এই সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত টিউটরদের অধিকাংশই সরকারি চাকরিতে সুযোগ না পেয়ে অস্থায়ীভাবে কাজ করেন। অনেকেই ভালো চাকরির সন্ধানে থাকেন এবং চাকুরী পেলে অনত্র চলে যান। এখানে কেজি টিউটরদের বেতন খুবই কম, যা দিয়ে জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব। ফলে কেজি স্কুল কর্তৃপক্ষই কোচিংয়ের ব্যবস্থা করে দেন এবং টিউটররা বাধ্য হন কোচিং করাতে। এতে করে শিক্ষার গুণগত মান আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
গ্রামাঞ্চলের প্রেক্ষাপটে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দরিদ্র, অপ্রতুল পোষাকধারী শিক্ষার্থীরাই পড়ে (অপ্রিয় হলেও সত্য)। এখানে অনেক শিক্ষার্থী অনিয়মিত এবং পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ কম। অন্যদিকে চাকচিক্যময় পরিবেশ, কোচিং ব্যবস্থা ইত্যাদি বিবেচনায় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো বেসরকারি স্কুলকে বেছে নেন। ফলে সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে বা ক্রমবর্ধমান হ্রাসরত।
বৃত্তি আসলে কার জন্য? বৃত্তি মূলত সেইসব দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য যারা সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ে এবং যাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা দুর্বল। তারা উপবৃত্তি তো পায়ই, এখন বৃত্তির মাধ্যমে আরও উৎসাহ পাবে। এ সুযোগ বেসরকারি স্কুলের জন্য নয়, যেমনটা ইউনিয়ন পরিষদের চাল বা ভাতা সব শ্রেণীর মানুষ গ্রহণ করে না।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনে সহায়ক হবে মনে করে সচেতন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ। এ উদ্যোগ শুধু দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে সহায়তা করবে না, বরং পুরো দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আরও মনোযোগী হবে এবং মানসম্মত শিক্ষার দিকে এগিয়ে যাবে। তাই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না করে সবাইকে এ উদ্যোগকে সফল করতে এগিয়ে আসা আহব্বান জানিয়েছেন অনেক শিক্ষানুরাগী, শিক্ষক ও সচেতন নাগরিক সমাজ।