সকালে ঘুম ভাঙার পর চোখে ময়লা জমা কীসের ইঙ্গিত

ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই চোখ খুলতে গিয়ে হঠাৎ আবিষ্কার করলেন চোখের কোণে সাদা বা হলদেটে একটা আঠালো ময়লা জমে আছে, চোখের পাপড়ি যেন একে অপরের সঙ্গে লেগে গেছে! পরিচিত দৃশ্য, তাই না? চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম রিউম (rheum)। এটি মূলত চোখের পানি, মৃত কোষ ও মিউকাসের মিশ্রণ যা রাতে ঘুমের সময় চোখ পরিষ্কার করার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই তৈরি হয়। তবে কখনো কখনো এটি চোখের সংক্রমণ বা কোনো স্বাস্থ্য জটিলতারও ইঙ্গিত দিতে পারে।

ঘুমের পরে চোখে ময়লা জমার কারণ: ঘুম থেকে উঠে চোখে যে ময়লা জমে থাকে তা একাধিক কারণে হতে পারে। এর মধ্যে কিছু স্বাভাবিক আবার কিছু চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।

স্বাভাবিক কারণ: দিনের বেলায় আমরা বারবার চোখের পাতা ফেলি, যার ফলে ধুলা, অতিরিক্ত পানি বা কোষ সহজেই পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু রাতে ঘুমের সময় চোখের পাতা না ফেলায় এই ময়লা কোণায় জমে যায়। যাদের অ্যালার্জি আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই কাঁদা একটু বেশি জমতে পারে। তবে এটি এখনও স্বাভাবিকের মধ্যেই পড়ে।

ব্লেফারাইটিস: চোখের পাপড়ির গোড়ায় প্রদাহ হলে তাকে ব্লেফারাইটিস বলা হয়। এর লক্ষণগুলো হলো—

চোখে চুলকানি বা জ্বালা
চোখ লাল হওয়া
পাপড়িতে আঁশের মতো সাদা খুঁটি
চোখের কোণায় কাঁদা
হালকা ফেনাযুক্ত চোখের পানি
এটি সাধারণত দুই চোখেই একসঙ্গে হয়।
কনজাংকটিভাইটিস: চোখের পাতার অভ্যন্তরে পাতলা ঝিল্লির প্রদাহ হলে একে বলা হয় কনজাংকটিভাইটিস। এটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অ্যালার্জির কারণে হতে পারে।

লক্ষণগুলো হলো—

চোখ লাল হওয়া
অতিরিক্ত পানি
চোখে খচখচে অনুভূতি
ঘন হলুদ বা সাদা ময়লা জমে যাওয়া
আরও পড়ুন: বিড়ালের আঁচড়ে কি ক্ষতি হতে পারে, চিকিৎসকের পরামর্শ

চোখে স্টাই: চোখের পাতার কোনো তেলগ্রন্থি বা ফলিকল ইনফেকশন হলে পাপড়ির গোড়ায় ছোট পুঁজযুক্ত ফোঁড়া হয়। এটি ব্যথা দেয় এবং হলুদ ময়লা তৈরি করে। সাধারণত এক চোখেই হয়।

টিয়ার ডাক্ট ব্লক হওয়া: চোখের পানি ঠিকভাবে না ঝরলে কোণায় সাদা বা হলুদ ছোট ছোট বলের মতো ময়লা জমে। সঙ্গে চোখ লাল হওয়া, ব্যথা বা ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গও থাকতে পারে।

ড্রাই আই: চোখ শুকিয়ে গেলে স্ট্রিংয়ের মতো মিউকাস তৈরি হয়, যা সকালে ঘুম থেকে উঠে ময়লার মতো দেখা যায়।

চোখে ময়লা জমলে যা করবেন: চোখে যদি কেবলমাত্র সকালে সামান্য ময়লা জমে তবে আপনি বাড়িতেই তা পরিষ্কার করতে পারেন। চিকিৎসকরা এই সমস্যার সমাধানে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এগুলো হলো:

হাত ধুয়ে নিন: চোখে হাত দেয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিন।
কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন: পরিষ্কার ও গরম পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে চোখে আলতো করে চেপে রাখুন।
চোখে পানি বা ড্রপ ব্যবহার করুন: চোখে শুষ্কতা থাকলে হাইড্রেটিং আইড্রপ বা স্যালাইন ব্যবহার করতে পারেন।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন: নিচের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চোখের ডাক্তার দেখানো উচিত—

চোখে ব্যথা
তীব্র লালচে ভাব বা জ্বালা
চোখ খুলতে কষ্ট হওয়া
ঘন হলুদ বা সবুজ রঙের কাঁদা
আলো সহ্য করতে না পারা
ঝাপসা দেখা
প্রতিদিন সকালে চোখে ময়লা থাকা বেশ স্বাভাবিক। এটি চোখের স্বাভাবিক পরিষ্কার প্রক্রিয়ার অংশ। তবে যদি এটি এক চোখে বেশি হয়, ময়লার রঙ ঘন বা অস্বাভাবিক হয়, চোখে চুলকানি বা জ্বালাভাব থাকে তবে তা হতে পারে কোনো সংক্রমণ বা প্রদাহের ইঙ্গিত। চোখ শরীরের সবচেয়ে সংবেদনশীল অঙ্গগুলোর একটি। তাই চোখে সামান্য অস্বস্তিও যদি অব্যাহত থাকে, দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সূত্র: হেলথলাইন

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *