শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট শিক্ষক সমাজ

মিয়া সুলেমান, ময়মনসিংহ থেকে।

দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও অসন্তোষের অবসান ঘটাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সহকারী প্রধান নিয়োগ বন্ধে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব পদে নিয়োগ এখন থেকে এনটিআরসিএ (NTRCA)–এর মাধ্যমে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে।

জানা গেছে, মেধা ও যোগ্যতার যাচাইয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত স্মারক প্রকাশের পর থেকেই শিক্ষক সমাজসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উচ্ছ্বাস ও স্বস্তি। এতে প্রতিফলিত হয়েছে—বিগত সময়ে প্রশাসনিক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া কতটা বিতর্কিত ছিল।

পূর্বে দেশের অধিকাংশ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় প্রধান ও সহকারী প্রধান নিয়োগ হয়ে আসত পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে ছিল স্বজনপ্রীতি, ঘুষ, পক্ষপাতিত্ব ও রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ। এর ফলে বহু যোগ্য শিক্ষক বঞ্চিত হলেও অযোগ্য ব্যক্তিরা দায়িত্ব পেতেন গুরুত্বপূর্ণ পদে।

এনটিআরসিএ ২য় চক্রে নিয়োগকৃত ইংরেজী শিক্ষক- মিয়া সুলেমান বলেন, “প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো এখন সরকারের হাতে। সেখানে যোগ্যতা, পরিশ্রম আর মেধাই মুখ্য হয়ে উঠবে। এনটিআরসিএ দায়িত্ব মানেই রিখুঁত একটা স্বচ্ছতা ও মেধার জয়।”

শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা সহকারী প্রধান শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বই পালন করেন না; তারা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক মানোন্নয়ন, শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠন ও ভবিষ্যৎ গঠনের সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত।

শিক্ষা বিশ্লেষক আব্দুস সামাদ বলেন, “যোগ্যতার ভিত্তিতে, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ হলে শিক্ষক সমাজ আর হতাশ হবে না। এটি শিক্ষার পরিবেশ গঠনে এবং রাষ্ট্রীয় অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

এনটিআরসিএ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মুক্তা জামান (সরাতী হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসা-১১১৮১৫) বলেন,
“গণতন্ত্র মানে জনগণের স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত। সরকারের এই অফিস আদেশ সেই গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতিফলন।”

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিবন্ধনের মতোই একটি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি নেতৃত্বগুণ, প্রশাসনিক দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনা জ্ঞান মূল্যায়নের জন্য অতিরিক্ত মানদণ্ড যুক্ত থাকবে।

নীতিমালা প্রণয়নের জন্য ইতোমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, এবং দ্রুত কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। নীতিমালা অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে এবং তখন থেকেই নতুন প্রক্রিয়া কার্যকর হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ উদ্যোগটি শিক্ষা খাতে দীর্ঘদিনের অনিয়মের অবসান ঘটাবে। যদিও কিছু পক্ষ এতে অসন্তুষ্ট হতে পারে, তবুও যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষক সমাজের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি হবে একটি অনুকূল শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ।

তারা একে শিক্ষা অঙ্গনের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মোড় ঘোরানো সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *