টেকসই গণপরিবহনে মাইলফলক স্থাপন করল লাহোর। মঙ্গলবার পাকিস্তানের প্রথম সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক ও ট্র্যাকবিহীন ট্রাম—সুপার অটোনোমাস র্যাপিড ট্রানজিট (সার্ট) ব্যবস্থা—পরীক্ষামূলক যাত্রার মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়েছে।
গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভার্চুয়াল ট্র্যাক প্রযুক্তি-নির্ভর এই অত্যাধুনিক সেবা সফল পরীক্ষামূলক চালনার মাধ্যমে দেশকে পরিচয় করিয়ে দিল পরিচ্ছন্ন, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন নগর পরিবহনের নতুন যুগে।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ উদ্বোধনী যাত্রায় নিজে বোর্ডে ওঠেন। রাইউইন্ড রোড থেকে মুসলিম টাউন পর্যন্ত যাত্রাপথে তিনি পাঞ্জাবের পরিবহনমন্ত্রী বিলাল আকবরের সঙ্গে লাইভ ট্রাফিকে ট্রামের কার্যক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করেন, কারিগরি দিক পর্যালোচনা করেন এবং ভবিষ্যৎ নগর উন্নয়নে প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
মরিয়ম নওয়াজ বলেন, “আমরা এমন এক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছি যেখানে গণপরিবহন হবে কার্যকর, পরিচ্ছন্ন ও সবার জন্য সহজলভ্য—শুধু বড় শহরে নয়, ছোট শহরগুলোতেও।”
কীভাবে কাজ করে
নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল নির্মিত সার্ট ট্রামে তিনটি প্রশস্ত বগিতে সর্বোচ্চ ৩২০ জন যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা রয়েছে। প্রয়োজনে চতুর্থ বগি যুক্ত করে ক্ষমতা ৪০০-এর বেশি করা সম্ভব। স্থানীয়ভাবে সংযোজিত একটি বিকল্প মডেলে ২৫০ জন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে, যা রুট ও কনফিগারেশনের ওপর নির্ভর করবে।
ইন্টেরিয়র সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াই-ফাই এবং স্মার্ট ডিসপ্লে সিস্টেম দ্বারা সজ্জিত।
প্রচলিত ট্রাম বা মেট্রোর মতো স্থায়ী রেললাইন প্রয়োজন হয় না। ভার্চুয়াল ট্র্যাক প্রযুক্তিতে জিপিএস, সেন্সর এবং ডিজিটাল ম্যাপিং ব্যবহার করে ট্রামকে সাধারণ সড়কেই নির্দিষ্ট রুটে চালানো হয়। এতে ব্যয়বহুল রেল অবকাঠামোর প্রয়োজন হয় না, যা জায়গার সংকট ও ভারী যানজটপূর্ণ শহরগুলোর জন্য উপযোগী।
একবার পূর্ণ চার্জে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাত্রা সম্ভব। দ্রুত চার্জিং স্টেশন মাত্র ১০ মিনিটে ২৭ কিলোমিটার যাত্রার জন্য পর্যাপ্ত চার্জ দিতে পারে।
ক্ষমতার বৈশিষ্ট্য
- প্রতি যানবাহনে ৩ থেকে ৪টি বগি
- ১০০+ আসন এবং ২০০+ দাঁড়ানোর জায়গা
- মোট ধারণক্ষমতা: ২৫০–৪০০ যাত্রী
- পাকিস্তানে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য ড্রাইভার-সহায়ক অপারেশন
পরবর্তী পরিকল্পনা
লাহোরে পরীক্ষামূলক চালনা পাঞ্জাবের পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবহন আধুনিকায়ন পরিকল্পনার অংশ। প্রথমে ফয়সালাবাদ ও গুজরানওয়ালায় চালু হবে, এরপর ১০টি শহরে এবং চার বছরের মধ্যে ৩০টি শহরে সম্প্রসারণ করা হবে।
লাহোরের পাইলট রুট হচ্ছে ঠোকার নিয়াজ বেগ থেকে হারবানস্পুরা পর্যন্ত ক্যানাল রোড বরাবর। বর্তমানে যানবাহনের প্রভাব, কার্যক্ষমতা ও জনসাড়া মূল্যায়ন চলছে। আগস্টের মাঝামাঝি লাহোর এক্সপো সেন্টারে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের জন্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষামূলক পর্যায়ে যাত্রা বিনামূল্যে রাখা হবে, পূর্ণাঙ্গ চালুর পর টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হবে।
বিশ্বব্যাপী প্রবণতা
চীন, তুরkiye এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইতোমধ্যেই সফলভাবে চালু হয়েছে ট্র্যাকবিহীন ট্রাম। লাহোরে এর সূচনার মধ্য দিয়ে পাঞ্জাব যানজট কমানো, নির্গমন হ্রাস এবং বড় ও মাঝারি শহরগুলোতে গণপরিবহন সহজলভ্য করার পথে বড় পদক্ষেপ নিল।