ছবি: রয়টার্স
গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –
সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে মস্কোর কয়েক দশকের আধিপত্য সহ্য করা পোল্যান্ডের অনেক নাগরিকের মনে এমনিতেই রাশিয়ার শত্রুতার ভয় গভীরভাবে প্রোথিত। তবে গত বুধবার পোল্যান্ড তার আকাশসীমায় রাশিয়ার ড্রোন ভূপাতিত করার পর এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
যদিও এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেন, ড্রোনগুলো ভুলবশত পোল্যান্ডে ঢুকে পড়তে পারে। রাশিয়ারও দাবি, তাদের ড্রোন হামলার লক্ষ্য ছিল ইউক্রেন; পোল্যান্ড নয়।
তবে এই ড্রোন অনুপ্রবেশকে পরিকল্পিত হামলা বলে আখ্যায়িত করে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, এটা কোনো ভুল না, এটি রাশিয়ার পরিকল্পিত আক্রমণ।
রুশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে, পোল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে অ্যাগনিয়েস্কা জেড্রুশাক এখন পরিখা খুঁড়ছেন। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের আশঙ্কায় তিনি তাঁর ১৩ বছর বয়সী ছেলেসহ পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করতে চান।
জেড্রুশাকের মতো হাজারো পোলিশ নাগরিক যোগ দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী সামরিক প্রশিক্ষণে। রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় পোল্যান্ডের সেনাবাহিনী পেশাদার ও স্বেচ্ছাসেবী কর্মী দিয়ে তাদের সামরিক শক্তি জোরদার করছে।
সামরিক পোশাকে, মুখে ক্যামোফ্লেজ রঙ মেখে জেড্রুশাক বলেন, ‘আমার সন্তানকে সুরক্ষিত রাখতে আমি সবকিছু করব, তাকে রক্ষা করার জন্য আমি অবশ্যই লড়তে চাই।’
ব্রানিয়েভোতে দক্ষিণ কোরীয় কে-২ ট্যাংকের প্রশিক্ষণ মাঠে জেড্রুশাকের মতো হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ২০২২ সালে এক বড় সামরিক সহযোগিতা চুক্তির অধীনে পোল্যান্ড ১৮০টি কে-২ ট্যাংক অর্ডার করেছিল।
পোল্যান্ডের সেন্ট্রাল মিলিটারি রিক্রুটমেন্ট সেন্টারের প্রধান কর্নেল গ্রেগর্জ ভাভরজিনকিউইচ জানান, ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে ২০ হাজারেরও বেশি পোলিশ নাগরিক স্বেচ্ছাসেবী সামরিক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন।
এই বছর ৪০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকেই এই জনসম্পৃক্ততা বেড়েছে।
২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পোল্যান্ড তার প্রতিরক্ষা ব্যয় অর্থনৈতিক উৎপাদনের ২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে এই বছর ৪ দশমিক ৭ শতাংশ করেছে। এটি ৩২ জাতির ন্যাটো জোটে সামরিক ব্যয়ের সর্বোচ্চ অনুপাত।
সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুদ্ধে কাজ করার বাধ্যবাধকতা থাকে না। স্বেচ্ছাসেবকরা পেশাদার সামরিক চাকরি, টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স ফোর্সেস (ডব্লিউওটি) এ যোগ দিতে পারেন, অথবা সক্রিয় বা প্যাসিভ রিজার্ভের অংশ হিসেবে থাকতে পারেন।
ন্যাটো-এর হিসাব অনুযায়ী, ২ লাখ ১৬ হাজার সদস্য নিয়ে পোল্যান্ড ন্যাটোর তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক শক্তি। যদিও এটি রাশিয়ার ১৫ লাখ সক্রিয় সেনা সদস্যের তুলনায় অনেক কম। পোল্যান্ড আগামী দশ বছরে তাদের সামরিক শক্তি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে।
আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে মোট ১ লাখ স্বেচ্ছাসেবককে সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে পোল্যান্ড।