গণমঞ্চ ডেস্ক নিউজ
সুস্থ থাকার অন্যতম শর্ত হলো পর্যাপ্ত ঘুম। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। দিনে ৬ ঘণ্টার কম ঘুম শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে বয়সভেদে ঘুমের প্রয়োজন আলাদা হয়—নবজাতকের ১২-১৭ ঘণ্টা, শিশুদের ৯-১৩ ঘণ্টা আর পূর্ণবয়স্কদের ৭-৮ ঘণ্টা।
পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে টক্সিনমুক্ত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং পরবর্তী দিনের কর্মক্ষমতা ধরে রাখে।
অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া
রাতে ঘুম না আসা বা বারবার ভেঙে যাওয়াকে বলা হয় ইনসমনিয়া। এতে দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুম, কাজে মনোযোগের অভাব, খিটখিটে মেজাজ, বিষণ্নতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম হালকা হয়ে যায়, তবে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তির কারণেও তরুণরা অনিদ্রার শিকার হচ্ছেন।
অধ্যাপক ম্যাথিউ ওয়াকার তার ‘হোয়াই উই স্লিপ’ বইয়ে লিখেছেন, ‘বিশ্বের একটা বিশাল অংশ অন্ধকারে জেগে থাকে। যে ঘুম তাদের নষ্ট হচ্ছে, সেটা যে পূরণ করা দরকার, সেটা তারা ভাবে না। তারা মনে করে, ‘যা গেছে তা গেছে।’
স্বাস্থ্যের ক্ষতি
গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের ঘাটতি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়। যদিও অনিদ্রার সঙ্গে সরাসরি অকালমৃত্যুর সম্পর্ক নেই, তবে স্মৃতিভ্রংশতা ও বিষণ্নতার মতো জটিল অসুখের সঙ্গে এর যোগ রয়েছে।
আরেক গবেষণা অনুযায়ী, টানা ১৭-১৯ ঘণ্টা জেগে থাকলে মস্তিষ্কে যে ক্ষতি হয়, তা অতিরিক্ত মদ্যপানের সমতুল্য। দীর্ঘসময় না ঘুমালে হ্যালুসিনেশন, স্মৃতিশক্তি হ্রাস এমনকি মানসিক বিকৃতিও দেখা দিতে পারে।
ঘুমের ওষুধের ঝুঁকি
অনিদ্রা দূর করতে অনেকে ঘুমের ওষুধ সেবন করেন, যা ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ব্যবহারে ওষুধ ছাড়া ঘুম আসা বন্ধ হয়ে যায়। অতিরিক্ত সেবনে হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে মৃত্যুঝুঁকিও তৈরি হয়। তাই অনিদ্রা দূর করার সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো প্রাকৃতিকভাবে ঘুম নিশ্চিত করা।
ঘুম ভালো করার ঘরোয়া উপায়
রাত জাগা কমান
যারা রাত জেগে কাজ করেন তারা অনেক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় পড়েন। রাতে কাজ করে তারা দিনে ঘুমিয়ে রাতের ঘুমের অভাব পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। কারণ সাধারণত তারা দিনের বেলার ঘুম কখনোই তেমন গভীর হয় না এবং তা রাতের ঘুমের সুফল দিতে পারে না শরীরকে। হার্ভাডের এক গবেষণা বলছে, রাতে কাজ করা লোকজনের অনেকেই নিশাচর হয়ে যান। তারা কিছুতেই দিনের আলোয় বের হতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।
সময় মেনে ঘুমানো
প্রতিদিন রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যেতে হবে এবং সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিছানা জেগে উঠতে হবে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা ঘুমানোর সময়কালকে নিয়মিত রাখে এবং শরীরও সময়ের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারে।
চা-কফি এড়িয়ে চলা
চা-কফি খেলে অনেকেরই ঘুমের সমস্যা হয়৷ শুধু চা-কফি নয় যেকোনো কোমল পানীয়ও ঘুমের সমস্যার কারণ হতে পারে। প্রফেসর ওয়াকার বলছেন, ঘুমানোর সময়ে থেকে ১২ ঘণ্টা আগে এসব খাওয়া বন্ধ করা উচিত। কেননা এর প্রভাব শরীরে থেকে যায় দীর্ঘ সময়।
মোবাইল-ল্যাপটপ থেকে দূরে থাকুন
আমরা অনেকেই বিশ্রাম নিতে কিংবা ঘুমের আগে ফেসবুক থেকে ঢু মেরে আসি। কিন্তু এতে ঘুম আসার পরিবর্তে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে চোখ থেকে ঘুম তাড়িয়ে দেয়। তাই ঘুমের সমস্যা দূর করতে চাইলে দীর্ঘসময় ধরে মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন
আমরা অনেকেই জানিনা, ঘুমের সমস্যার পেছনে খাদ্যাভাসের ভূমিকা অনেক। যারা ইনসমনিয়ায় ভুগছেন তাদের জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে।
ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার
ম্যাগনেসিয়াম হলো এমন একটি খনিজ পদার্থ যা পেশীকে শিথিল করতে এবং স্ট্রেস কম করতে সাহায্য করে। ডার্ক চকোলেট, বাদাম, অ্যাভোকাডো এগুলোতে ম্যাগনেসিয়াম আছে। রাতে এগুলো খেলে ভালো উপকার পাবেন।
মেলাটোনিনযুক্ত খাবার
মেলাটোনিন শুধু ঘুম আসতে নয়, ঘুম দীর্ঘস্থায়ী করতেও সাহায্য করে। আমরা সালাদ হিসেবে যা খাই যেমন টমেটো, শসা, ব্রোকোলি, সরিষা, আখরোট, বেদানা ইত্যাদিতে মেলাটোনিন থাকে। প্রতিদিনের খাবারে সবজিগুলো যোগ করলে ঘুমের সমস্যা কেটে যাবে৷
কলা
অনিদ্রা কমাতে কলা খুবই কার্যকর৷ কলাতে আছে ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম যা মাংসপেশি শিথিল করে দ্রুত ঘুম আনয়নে সাহায্য করে৷
গরম দুধ
অনিদ্রা দূর করতে গরম দুধের কোনো বিকল্প নেই। গরম দুধে থাকে ট্রিপটোফ্যান নামে এক ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড। যা সিরোটোনিন হিসেবে কাজ করে আর এই সিরোটোনিন ঘুম আনতে খুবই সহায়ক।
মধু
মধুকে বলা হয় সর্বরোগের মহৌষধ। এক চামচ মধু ভালো ঘুমের জন্য খুবই সহায়ক কেননা এটি শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কমাতেও মধুর জুড়ি নেই।
তথ্যসূত্র: বিবিসি