মামলাগুলো মনগড়া অভিযোগের ওপর দাঁড় করানো হয়েছে: টিউলিপ 

গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা তিনটি পৃথক মামলায় বাদীপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত।

বুধবার (১৩ আগস্ট) বিচার শুরুর দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে টিউলিপ সিদ্দিক মামলাগুলোকে ‘প্রহসন’ ও ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক’ বলে মন্তব্য করেন।

যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মন্ত্রী টিউলিপের অনুপস্থিতিতেই বিচারিক কার্যক্রম চলছে। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ‘ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক’ অভিযোগ ছড়াচ্ছে এবং মামলাগুলো ‘মনগড়া অভিযোগের ওপর দাঁড় করানো হয়েছে’।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ও বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে টিউলিপ বলেন, তিনি আদালতের কোনো সমন পাননি।

টিউলিপ এক্স-এ লিখেছেন, ‘ঢাকায় চলমান তথাকথিত বিচার আসলে এক প্রহসন—মনগড়া অভিযোগের ভিত্তিতে গড়া, আর এর পেছনে আছে স্পষ্ট রাজনৈতিক প্রতিশোধের উদ্দেশ্য। গত এক বছরে আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বারবার বদলেছে। অথচ একবারও আমার সঙ্গে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি কখনো আদালতের সমন পাইনি, কোনো সরকারি চিঠি পাইনি, এমনকি কোনো প্রমাণও দেখানো হয়নি। এটি যদি সত্যিকারের আইনি প্রক্রিয়া হতো, তবে কর্তৃপক্ষ আমার বা আমার আইনজীবী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করত, আমাদের আনুষ্ঠানিক চিঠির জবাব দিত এবং যে প্রমাণ থাকার দাবি তারা করছে, তা উপস্থাপন করত।’

তার লিখেছেন, ‘বরং তারা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক অভিযোগ ছড়িয়ে দিচ্ছে—যা গণমাধ্যমে ব্রিফ করা হয়েছে, কিন্তু তদন্তকারীরা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আমার কাছে তা হাজির করেনি।’

টিউলিপ দাবি করেন, সম্প্রতি লন্ডন সফরের সময় তিনি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রস্তাব দেন, কিন্তু ইউনূস তা প্রত্যাখ্যান করেন। তার অভিযোগ, রাজনৈতিক সুবিধা নিতে গিয়ে ইউনূস তার সুনাম ক্ষুণ্ন করছেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের আচরণ যুক্তরাজ্যে আমরা যে ন্যায়বিচারের নীতি মেনে চলি, তার সঙ্গে একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুরু থেকেই আমি স্পষ্ট করেছি—আমি কোনো ভুল করিনি। আমার বিরুদ্ধে যে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হাজির করা হলে তার জবাব দেব। রাজনৈতিক সুবিধা নিতে আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টা ভিত্তিহীন ও ক্ষতিকর।

মামলার প্রথম দিনে আদালতে অভিযোগ আনা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার করে বেআইনিভাবে তার মা (রেহানা) ও ভাইবোনদের কাছে জমি হস্তান্তরের ব্যবস্থা করিয়েছেন।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের জন্য কূটনৈতিক এলাকার সেক্টর ২৭-এর পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে প্রতিটি ৭ হাজার ২০০ বর্গফুট আয়তনের ছয়টি প্লট অবৈধভাবে নিয়েছেন।

দুদকের উপপরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিদ্যমান আইন ভঙ্গ করে ঢাকায় নিজের মালিকানাধীন বাসস্থানের তথ্য গোপন করেছিলেন।

দুদক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছয়টি আলাদা মামলা করেছে। প্রতিটি মামলায় হাসিনা আসামি হিসেবে আছেন। টিউলিপ সিদ্দিককে তার মা ও দুই ভাইবোনের সাথে সংশ্লিষ্ট তিনটি মামলায় সহযোগী আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুদকের আইনজীবী সালাহউদ্দিন আদালতে বলেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিক শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত ও প্ররোচিত করেছেন। আর হাসিনা তার বিশেষ ক্ষমতা ও সরাসরি প্রভাব ব্যবহার করে জনগণের বিশ্বাস ভঙ্গ করে সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছেন।’

তিনি আরও জানান, তদন্তে সংগৃহীত নথি থেকে প্রমাণ মিলেছে যে শেখ হাসিনা নিয়মবহির্ভূতভাবে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দে তার বোন শেখ রেহানাকে সুবিধা দিয়েছেন।

আদালত পরবর্তী শুনানির তারিখ ২৮ আগস্ট ধার্য করেছে।

দুদক টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব দুর্নীতি শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। গত বছর গণ-আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসনের অভিযোগে হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।

সব আসামিকে পলাতক ঘোষণা করেছে দুদক। গত ৩১ জুলাই টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনা, তাদের পরিবারের সদস্য এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তাসহ মোট ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এ পর্যন্ত কোনো প্রাক-বিচার শুনানিতে টিউলিপ সিদ্দিক উপস্থিত হননি। গত এপ্রিলেই আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *