ছবি: রয়টার্স
গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –
সরকার ভেঙে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। দীর্ঘদিনের পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের প্রতিবাদে টানা কয়েকদিনের তরুণ নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের পর তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। খবর বিবিসির।
সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে আন্দ্রি রাজোয়েলিনা বলেন, ‘সরকারের সদস্যরা যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে থাকে, আমরা তা স্বীকার করছি এবং দুঃখ প্রকাশ করছি।’
‘জেন-জি’ নামে পরিচিত এই আন্দোলনে গত বৃহস্পতিবার থেকে মাদাগাস্কারের বিভিন্ন শহরে হাজারও তরুণ-তরুণী রাস্তায় নেমে আসে। তাদের স্লোগান ছিল—’আমরা বাঁচতে চাই, টিকে থাকতে নয়।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত ‘অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগের’ নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি জানান, এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২২ জন নিহত এবং ১০০ জন আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের প্রকাশিত হতাহতের সংখ্যাকে প্রত্যাখ্যান করেছে মাদাগাস্কারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, জাতিসংঘের এ তথ্য ‘গুজব বা বিভ্রান্তিকর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।’
প্রথমে রাজধানী আনতানানারিভোতে আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা দেশের আরও আটটি শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
সহিংসতা ও লুটপাটের খবর পাওয়ার পর রাজধানীতে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভোলকার তুর্ক বলেছেন, তিনি মাদাগাস্কারের নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস দমন অভিযান দেখে ‘চকিত’ হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই অভিযানে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার, মারধর এবং গুলি চালানো হয়েছে।
সোমবার এক বিবৃতিতে তুর্ক বলেন, ‘আমি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, অপ্রয়োজনীয় ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলপ্রয়োগ বন্ধ করুন এবং সব অকারণ গ্রেপ্তারকৃত আন্দোলনকারীকে অবিলম্বে মুক্তি দিন।’
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত আন্দোলনকারীরা ও সাধারণ মানুষ, এছাড়া পরে বিভিন্ন ব্যক্তির বা গ্যাং-এর দ্বারা সংঘটিত বিস্তৃত সহিংসতা ও লুটপাটে নিহত অন্যরাও অন্তর্ভুক্ত।
গত সপ্তাহে মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা শক্তি মন্ত্রীর কাজ যথাযথভাবে না করার কারণে তাকে বরখাস্ত করেছেন। তবে আন্দোলনকারীরা দাবি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট এবং বাকি সরকারকেও পদত্যাগ করতে হবে।
সোমবার আবার হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামে।
রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম টেলিভিজিওনা মাদাগাস্কারে ভাষণকালে রাজোয়েলিনা বলেন, ‘আমি বিদ্যুৎ এবং পানি সরবরাহে সমস্যা থেকে সৃষ্ট রাগ, দুঃখ এবং অসুবিধা বুঝতে পারছি।’
তিনি জানান, তিনি ‘প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের কার্যক্রম শেষ করেছেন’ এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের জন্য আবেদন আগামী তিন দিনে গ্রহণ করা হবে, এরপর নতুন সরকার গঠিত হবে।
রাজোয়েলিনা আরও বলেন, তিনি তরুণদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান।
গত সপ্তাহে আনতানানারিভোতে এক আন্দোলনের সময় একটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আমরা ঝামেলা চাই না, আমরা শুধু আমাদের অধিকার চাই।’
তবে গত সপ্তাহের কিছু রিপোর্টে বলা হয় যে আন্দোলনকারীরা অন্তত দুইজন সংসদ সদস্যের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তারা সম্ভবত সেখানে আগুন দিয়েছে। তবে ‘জেন জি’ আন্দোলন অভিযোগ করেছে, তাদের কার্যক্রম ও উদ্দেশ্যকে দুর্বল করতে অন্য সুবিধাভোগীরা বিভিন্ন ভবন লুট করেছে।
মাদাগাস্কার স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৬০ সাল থেকে একাধিক বিদ্রোহের কারণে বিশৃঙ্খল তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালের গণআন্দোলন উল্লেখযোগ্য, যা সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে এবং রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে।
এই আন্দোলনগুলো রাজোয়েলিনার জন্য ২০২৩ সালে তার তৃতীয়বারের নির্বাচনের পর থেকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।