মহাসাগরের অন্ধকার স্তর :কোরআনের বাণী ও আধুনিক বিজ্ঞানের মিল

মাওঃ শামীম হুসাইন কেরানীগঞ্জ থেকে

মহাসাগর পৃথিবীর প্রায় 71% জুড়ে রয়েছে। এটি শুধু জীবন ধারণের উৎস নয়, বরং রহস্যময় অজানা জগতও বটে। মানুষের চোখে দেখা যায় শুধু এর উপরিভাগ, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছে যায়। কিন্তু এর গভীরে নামলেই অপেক্ষা করছে এক অদ্ভুত অন্ধকার, যা হাজার বছরের পরেও মানুষের কাছে বিস্ময়ের। আশ্চর্যের বিষয় হলো, আধুনিক বিজ্ঞান আজ যেসব তথ্য উদঘাটন করছে, কোরআন ১৪০০ বছর আগেই সেসবের স্পষ্ট উল্লেখ করেছে।

মহাসাগরের অন্ধকার স্তর

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সমুদ্রের ২০০ মিটার (৬৫৬ ফুট) গভীরতার নিচে সূর্যের আলো প্রায় পৌঁছায় না। আরও নিচে নামলে অন্ধকার এতটাই ঘন হয় যে, সেখানে মানুষের চোখ কার্যত অকার্যকর হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রের গভীরতা যত বাড়তে থাকে, ততই অন্ধকারের স্তর ঘনীভূত হয়। বিশেষজ্ঞরা এটিকে “Midnight Zone” বা অন্ধকার স্তর বলে থাকেন।

এই অঞ্চলে রয়েছে এমনসব প্রাণী, যাদের শরীর থেকে নিজেরাই আলো উৎপন্ন করতে পারে – একে বলা হয় বায়োলুমিনেসেন্স (Bioluminescence)। মাছের চোখ, শরীর বা বিশেষ অঙ্গ থেকে নির্গত এই আলো তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করে।

কোরআনের বর্ণনা

কোরআনে সমুদ্রের অন্ধকার স্তরের বর্ণনা অত্যন্ত বিস্ময়করভাবে পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন:

“أَوْ كَظُلُمَاتٍ فِي بَحْرٍ لُّجِّيٍّ يَغْشَاهُ مَوْجٌ مِّن فَوْقِهِ مَوْجٌ مِّن فَوْقِهِ سَحَابٌ ۚ ظُلُمَاتٌ بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ ۚ إِذَا أَخْرَجَ يَدَهُ لَمْ يَكَدْ يَرَاهَا ۗ وَمَن لَّمْ يَجْعَلِ اللَّهُ لَهُ نُورًا فَمَا لَهُ مِن نُّورٍ”
(সূরা আন-নূর, ২৪:৪০)

অর্থাৎ – “অথবা (অবিশ্বাসীর অবস্থা) সেই অন্ধকারের মতো, যা রয়েছে এক গভীর সাগরে, যাকে ঢেকে রেখেছে তরঙ্গ, তার উপরে আরও তরঙ্গ, তার উপরে মেঘ। অন্ধকারের পর অন্ধকার—যখন সে নিজের হাত বাড়ায় তখনও প্রায় তা দেখতে পারে না। আর আল্লাহ যাকে নূর দেননি, তার জন্য কোনো নূর নেই।”

এখানে তিন স্তরের অন্ধকারের কথা বলা হয়েছে –

গভীর সমুদ্রের অন্ধকার, তরঙ্গের আড়ালে অন্ধকার, মেঘের আড়ালে অন্ধকার
আধুনিক বিজ্ঞানীরা আজ প্রমাণ করেছেন যে, সমুদ্রের গভীর স্তরে আলো পৌঁছায় না। সেখানে অন্ধকারের স্তর একটির পর একটি হয়ে থাকে, যা কোরআনের এই আয়াতের সাথে হুবহু মিলে যায়।

আধুনিক বিজ্ঞানের মতামত

বিখ্যাত মহাসাগর-বিজ্ঞানী Dr. William Hay বলেছেন : “মানব চোখে আলো পৌঁছানো বন্ধ হয় সমুদ্রের নির্দিষ্ট স্তরে নেমে। প্রায় ২০০ মিটারের নিচে নেমে গেলে আমরা সম্পূর্ণ অন্ধকার জগতে প্রবেশ করি, যেটা সাধারণ মানুষের পক্ষে কল্পনাতীত।”

একইভাবে National Oceanic and Atmospheric Administration (NOAA) জানিয়েছে : “সমুদ্রের গভীরে একাধিক অন্ধকার স্তর রয়েছে। এই স্তরগুলোর উপস্থিতি শুধু আধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি দিয়েই বোঝা সম্ভব।”

কোরআনের বাণীর মহিমা

১৪০০ বছর আগে যখন সমুদ্র নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা শুরুই হয়নি, তখন কোরআনে সমুদ্রের অন্ধকার স্তর, তরঙ্গের স্তর, মেঘের আড়ালে অন্ধকার—এসবের বিশদ বিবরণ এসেছে।

এই বিষয়টি প্রমাণ করে – কোরআন মানুষের লেখা কোনো গ্রন্থ নয়। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এক ঐশী গ্রন্থ। বিজ্ঞান যতই অগ্রসর হবে, কোরআনের সত্যতা ততই উজ্জ্বলভাবে প্রকাশ পাবে।

মহাসাগরের অন্ধকার স্তর আজ বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। অথচ কোরআন বহু আগে এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে আলোকপাত করেছে। তাই বলা যায় – কোরআন শুধু আধ্যাত্মিক নির্দেশনাই দেয় না, বরং এটি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কেও মানুষকে সঠিক দিশা দেয়।

সমুদ্রের গভীর অন্ধকার স্তরের এই বর্ণনা শুধু আল্লাহর অস্তিত্ব ও মহাশক্তির প্রমাণ নয়, বরং মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *