গণমঞ্চ ডেস্ক
ভারতের মহারাষ্ট্রের পালঘরে নারীপাচার চক্রের হাত থেকে সম্প্রতি এক শিশুকে উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ। মীরা-ভায়ন্দর ভাসাই-ভিরার (এমবিভিভি) পুলিশের যৌথ অভিযানে নয়গাঁওয়ের একটি ফ্ল্যাট থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। সে বাংলাদেশি বলে জানা গেছে। এছাড়া, নারীপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই ফ্ল্যাট থেকে মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশের বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এক নাবালিকাসহ পাঁচ নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ওই নাবালিকাসহ তিনজন বাংলাদেশের নাগরিক।
জানা যায়, উদ্ধার হওয়া ওই শিশুকে জুভেনাইল ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, শিশুটিকে বাংলাদেশ থেকে গুজরাটের নাদিয়াদে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তার ওপর যৌন নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ।
বিজয় কদম নামে নওগাঁও থানার এক তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতে নিয়ে আসার পর শিশুটির পরিচিত এক নারী তাকে বিক্রি করে দেন। শিশুটিকে এরপর পতিতাবৃত্তিতে ঠেলে দেয়া হয়। তার পর থেকে তাকে নানা জায়গায় পাচার করা হয়। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, গত তিন মাস ধরে তাকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তাকে ২০০ জনের বেশি লোক ধর্ষণ করে। এ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী এক কর্মকর্তা।
গত ২৬ জুলাই মুম্বাই, পুনে ছাড়াও গুজরাট, কর্ণাটকসহ ভারতের বেশ কয়েকটি জায়গায় নারীপাচার চক্রের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে পুলিশ। তখনই পালঘর থেকে এই ওই শিশুসহ কয়েকজনকে উদ্ধার করে পুলিশ। পাচার হওয়া কিশোরী এবং নারীদের মাদক দেয়ার পর নানা জায়গায় পাচার করা হতো। তদন্তকারীরা বলছেন, এই পাচারচক্রের শিকড় অনেক গভীরে এবং বহুদূর বিস্তৃত। সেই শিকড়ের খোঁজ চলছে ভারতজুড়ে।
এর আগে সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ জানায়, এনজিও এক্সোডাস রোড ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন এবং হারমনি ফাউন্ডেশনের সহায়তায় গত ২৬ জুলাই পুলিশের মানব পাচার-বিরোধী ইউনিট অভিযান পরিচালনা করেছিল।
হারমনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি আব্রাহাম মাথাই বলেন, ‘১২ বছর বয়সি মেয়েটি জানিয়েছে যে তাকে প্রথমে গুজরাটের নাদিয়াদে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং সেখানে তিন মাস ধরে ২০০ জনেরও বেশি পুরুষ তাকে যৌন নির্যাতন করে। মেয়েটি তার কৈশোরও দেখেনি, কিন্তু তার শৈশব কেড়ে নিয়েছে এই ধরনের নৃশংস ব্যক্তিরা।’
মাথাই জানান, স্কুলে একটি বিষয়ে ফেল করার পর বাবা-মায়ের বকার ভয়ে মেয়েটি তার পরিচিত এক নারীর সাথে পালিয়ে এসেছিল। ওই নারী তাকে গোপনে ভারতে এনে পতিতাবৃত্তিতে ঠেলে দেয়।
পুলিশ কমিশনার নিকেত কৌশিক বলেন, ‘এমবিভিভি পুলিশ পুরো নেটওয়ার্কটি উন্মোচন করতে এবং দুর্বল কিশোর-কিশোরীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’
যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিসহ নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত সবাইকে খুঁজে বের করার জন্য অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সূত্র: আনন্দবাজার, নিউজ১৮