গণমঞ্চ ডেস্ক নিউজ
সম্প্রতি ‘টক অব দ্যা কান্ট্রিতে’ পরিণত হয়েছে কেরানীগঞ্জে থানা ব্যারাকে ৫ মাস ধরে নারী কনস্টেবলকে সহকর্মীর ‘ধর্ষণের’ ইস্যু। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে মামলাও হয়েছে। শনিবার (২৩ আগস্ট) এ ঘটনায় আদালতে অভিযুক্তের রিমান্ড আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কেরানীগঞ্জ থানার এসআই জুলফিকার আলী।
এদিন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ব্যারাকে সহকর্মীকে ‘ধর্ষণের’ অভিযোগের মামলাটি আদালতে উঠলে আসামির কাঠগড়ার এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলেন অভিযুক্ত কনস্টেবল সাফিউর রহমান। তাকে আদালতে হাজির করে এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
তবে সাফিউরের পক্ষে আইনজীবী না থাকায় ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সালেহ তার বক্তব্য শুনতে চান। পরে এক বছর আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসা এই কনস্টেবল আদালতকে বলেন, তার বিরুদ্ধে যে সহকর্মী অভিযোগ করেছেন, তাকে বিয়ে করে সংসার করতে চান তিনি। একপর্যায়ে বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলা মিটিয়ে নেয়ার ‘পরামর্শ’ দিয়ে সাফিউরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়েরের পর শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে ঢাকার মিল ব্যারাক পুলিশ লাইন থেকে ৩০ বছর বয়সী সাফিউরকে গ্রেপ্তার করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। তারও আগে মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) থানার ওসির কাছে একজন নারী কনস্টেবল সহকর্মী সাফিউরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন।
ওই নারী কনস্টেবলের অভিযোগ, গত ফেব্রুয়ারিতে আশুলিয়া থানা থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় যোগ দেন তিনি। তাকে ৫ মাস ধরে ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করে আসছেন’ সাফিউর।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ঢাকার পুলিশ সুপারের তরফে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনি বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে উভয় পুলিশ সদস্যকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেন এবং ঘটনাটি তদন্তের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করেছেন। তবে সেদিন কনস্টেবল সাফিউরের নাম না প্রকাশ করে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরুর কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।’ এ ঘটনায় ওই কনস্টেবল ‘দোষী সাব্যস্ত হলে’ বিজ্ঞপ্তিতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়।
পরদিন শুক্রবার ধর্ষণের অভিযোগ এনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন ওই নারী কনস্টেবল। সবশেষ শনিবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করার পর রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে বিচারক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সালেহ ওই কনস্টেবলের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান এবং তাকে সামনে আসতে বলেন।
পরে সাফিউর কাঠগড়ার কিছুটা সামনে এগিয়ে এসে বলেন, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনি তাকে (নারী কনস্টেবলকে) বিয়ে করবেন। এ সময় বিচারক আগে বিয়ে করেছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী আছে। এক বছর আগে বিয়ে করেছি।’
পরবর্তীতে স্ত্রীকে রেখে আরেকজনের সঙ্গে প্রেম করেন কেন, বিচারকের এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সাফিউর বলেন, ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী তাকে বিয়ে করবেন। এ সময় আদালত বলেন, ‘সে (ভুক্তভোগী) তো মামলা দিয়েছে।’ একপর্যায়ে ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলা সমাধানের পরামর্শ দিয়ে আদালত বলেন, ‘বউ রেখে আরেক নারীর দিকে চোখ যায় কীভাবে!’
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তার উপস্থিতিতেই রিমান্ড শুনানির দিন রোববার (২৪ আগস্ট) ধার্য করে সাফিউরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
মামলায় ওই নারী কনস্টেবল অভিযোগ করেছেন, ‘বিয়ের প্রলোভন’ দেখিয়ে সাফিউর রহমান ১৫ অগাস্ট রাত আড়াইটা থেকে ৪টা পর্যন্ত দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ভবনের দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ পাশের নারী ব্যারাকে তার শয়নকক্ষে তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন।
তার অভিযোগ, একইভাবে বিগত ৫ মাসে সপ্তাহে দুইবার করে তাকে ধর্ষণ করার পাশাপাশি তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিওচিত্র নিজের ব্যবহৃত আইফোনে ধারণ করেন সাফিউর। এমনকি ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ‘হুমকিও’ দেন তিনি।