গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –
যুক্তরাষ্ট্রে বাজেট নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে সরকারি ব্যয় সংক্রান্ত বিল অনুমোদন না পাওয়ায় বুধবার (১ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রমে ‘শাটডাউন’ শুরু হয়েছে।
১ অক্টোবর থেকে আমেরিকায় অর্থবর্ষ শুরু হয়ে চলে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সেই হিসাবে মঙ্গলবারই ছিল চলতি অর্থবর্ষের শেষ দিন। মার্কিন সরকারের জন্য বরাদ্দ তহবিলের মেয়াদ ওই দিনই শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নতুন বিল নিয়ে একমত হতে পারেননি সিনেটের রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট সদস্যরা।
শেষ মুহূর্তে রিপাবলিকানরা একটি সাময়িক তহবিল পাস করানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সিনেট তা অনুমোদন দেয়নি। এই বিল পাস করতে প্রেসিডেন্টের টেবিলে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় ভোট মেলেনি। হোয়াইট হাউজ অভিযোগ করেছে, ডেমোক্র্যাটরা সাময়িক তহবিল অনুমোদন দেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে মোট ১০০ জন সদস্য রয়েছেন। সরকারি ব্যয়সংক্রান্ত বিল পাস করতে ৬০ ভোটের প্রয়োজন থাকলেও বিলটি ৪৭–৫৩ ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যা ৫৩।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দীর্ঘ ও কঠিন সংঘাতের সূচনা হতে পারে। এতে হাজার হাজার ফেডারেল কর্মী তাদের চাকরি হারাতে পারেন।
মার্কিন সরকারি সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, ১৯৮১ সালের পর এটি ১৫তম সরকারি শাটডাউন। এর প্রভাব পড়বে সেপ্টেম্বরের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসংস্থান প্রতিবেদন প্রকাশের ওপর। এছাড়া অনেক ফেডারেল কর্মীর বেতন আটকে থাকবে, বিমান পরিবহন ধীরগতিতে চলবে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা স্থগিত হবে, সেনাদের বেতন স্থগিত থাকবে এবং দৈনিক ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতির মুখে ৭ লাখ ৫০ হাজার সরকারি কর্মী ছাঁটাইয়ের মুখে পড়বেন।
দেশটির ফেডারেল কর্মকর্তা এবং সাধারণ জনগণও শাট ডাউনের প্রভাব টের পাবেন। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবা যেমন সামাজিক নিরাপত্তা এবং খাদ্য সহায়তা চালু থাকলেও, কম গুরুত্বপূর্ণ কিছু কার্যক্রম এবং ছোট ব্যবসার ঋণ অনুমোদন স্থগিত থাকবে।
সরকারি তহবিল নিয়ে সিনেট সদস্যদের মধ্যে হোয়াইট হাউসে একাধিক বৈঠক হয়েছে। কিন্তু মার্কিন সরকার যে অচলাবস্থায় পড়তে যাচ্ছে, তা সোমবারই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
ডেমোক্র্যাটরা শাট ডাউনের জন্য রিপাবলিকানদের দায়ী করছেন। ডেমোক্র্যাট সিনেট সদস্য চাক শুমার বলেছেন, ‘রিপাবলিকানরা স্বাস্থ্যসেবা সমস্যার সমাধান না করে আমাদের শাট ডাউনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।’
হাউসের ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে রিপাবলিকানরা ভোট দিচ্ছেন।’
তহবিল সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় ডেমোক্র্যাটদেরই দোষারোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইতোমধ্যে গণছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘শাটডাউনের অনেক ভালো দিকও রয়েছে। আমরা যেগুলো চাই না, তেমন অনেক জিনিস ফেলে দিতে পারি। অনেককে ছাঁটাই করা হবে। তারা প্রত্যেকে হবেন ডেমোক্র্যাট।’
ট্রাম্প ফেডারেল সরকারের বড় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন। তিনি জানিয়েছেন, শাটডাউন আরও কর্মী ছাঁটাই ও সরকারি প্রোগ্রাম কমানোর পথ খুলে দিতে পারে। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ সরকারি কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।
ডেমোক্র্যাটরা প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন, কারণ রিপাবলিকানরা লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব যুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। রিপাবলিকানরা বলছেন, এ বিষয় আলাদাভাবে সমাধান করতে হবে।
মার্কিন সরকারি তহবিলের মধ্যে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার এজেন্সি কার্যক্রমে খরচ হয়, যা মোট ৭ ট্রিলিয়ন বাজেটের প্রায় এক চতুর্থাংশ। বাকি টাকা স্বাস্থ্য, পেনশন ও ঋণের সুদে ব্যবহার হয়।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই শাটডাউন আগের চেয়ে দীর্ঘ হতে পারে। ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা ডেমোক্র্যাটদের শাস্তি হিসেবে সরকারি প্রোগ্রাম ও কর্মী ছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে ট্রাম্পের বাজেট পরিচালক রাসেল ভাউট ‘কম দ্বি-দলীয় বরাদ্দ’ চাইতে গিয়ে স্থায়ীভাবে চাকরি ছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়েছেন।
চলমান অস্থিরতায় মার্কিন শেয়ারবাজারে শেয়ার দর কমেছে, সোনার দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে এবং এশিয়ার শেয়ারও ওঠা-নামা করছে। বিনিয়োগকারীরা মূল তথ্য প্রকাশে বিলম্ব এবং চাকরি হারানোর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। ডলার সপ্তাহের মধ্যে নিম্নতম অবস্থানে রয়েছে।