গণমঞ্চ ডেস্ক নিউজ
বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকদের অন্যায় মুনাফা বন্ধ এবং বেতন বৈষম্য দূরীকরণের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এ কথা জানান তিনি। বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএইচসিডিওএ)-এর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও সাধারণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে অন্যায় মুনাফা কাম্য নয়। এটি বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীদের মধ্যে বেতন বৈষম্য দূরীকরণের জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক ১২–১৫ হাজার টাকায় চাকরি করছেন, যা আদর্শ নয়। বেসরকারি খাতে বেতন কাঠামোর অভাব দূর করার জন্য একটি বেতন বোর্ড গঠন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা, পরীক্ষা এবং অন্যান্য কার্যক্রমে বেসরকারি পর্যায়ের অংশগ্রহণ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। জাতীয় সংকটে এগিয়ে আসায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ। তবে ১০–১২ হাজার মানুষ শয্যা ছাড়া সেবা নিচ্ছেন। এটি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত জনগণের ক্ষোভ প্রশমিত করা সম্ভব হবে না।
ডা. সায়েদুর রহমান স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই মান প্রণয়নের উদ্যোগের কথাও তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে হামলা ও চিকিৎসক নিগ্রহ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, সব নির্যাতনই অন্যায়, বিশেষ করে নারী নির্যাতন মারাত্মক অন্যায়। স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় কঠোর শাস্তির বিধান থাকা উচিত।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, স্বাস্থ্য খাতে ন্যায্য মুনাফা, কর্মীদের অধিকার এবং সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে রোগী, চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠান—সবার জন্য একটি স্বচ্ছ, নিরাপদ ও সমান পরিবেশ তৈরি হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এ সময় তিনি বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে রোগীদের অপ্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং অযথা চিকিৎসা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের রোগীদের বিদেশি চিকিৎসার দিকে ঝুঁকির পরিবর্তে দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা বাড়ানো জরুরি।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, চিকিৎসকরা রোগীর অর্থ ও সময় বাঁচিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা দিন। অযথা পরীক্ষা ও ওষুধের ব্যবহার রোগীর ওপর আর্থিক বোঝা সৃষ্টি করে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাও ক্ষুণ্ন করে।
অভিষেক অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. এ এম শামীম বলেন, ভুল চিকিৎসার অভিযোগে কাউকে তদন্ত ছাড়া গ্রেপ্তার না করতে চাই। পাশাপাশি আমরা ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করছি, যাতে দেশের সব বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য থাকবে। শুধুমাত্র মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানই আমাদের সদস্য হতে পারবে। এটি স্বাস্থ্য খাতের স্বচ্ছতা ও মান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সাইদুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মো. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল।