বাবার সঙ্গে প্রথম বিদেশ সফরে কিমকন্যা: বেইজিংয়ে তার আগমন ঘিরে কেন এত আলোচনা?

গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন চীনের বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজনে অংশ নিতে মঙ্গলবার তার সাঁজোয়া সবুজ ট্রেন থেকে নামার মুহূর্তে অনেকের চোখ আটকে যায় তার পেছনে থাকা এক তরুণীর দিকে। চীনা কর্মকর্তারা করমর্দন করে লাল গালিচায় স্বাগত জানানোর সময়, চুল বাঁধা, কালো পোশাকে হাসিমুখে দেখা যায় তাকে। 

ধারণা করা হচ্ছে, এই তরুণী কিম জু আয়ে, যিনি উত্তর কোরিয়ার নেতার রহস্যময়ী কন্যা।গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সামরিক সম্পর্কিত অনুষ্ঠানে তাকে জনসমক্ষে দেখা গেছে। এবার বেইজিং সফরে তার উপস্থিতি কিম তাকে ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তুত করছেন কি না—এ প্রশ্ন নতুন করে সামনে এনেছে।

তরুণীটির এটিই প্রথম বিদেশ সফর, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতো স্বৈরশাসকদের সঙ্গে তার বাবা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এমন পরিস্থিতি ভবিষ্যতে তাকেও সামলাতে হতে পারে। 

তবে, বুধবার তিয়ানআনমেন স্কয়ারে শি-এর সামরিক কুচকাওয়াজের আগে তার বাবা লাল গালিচায় হেঁটে গেলেও, সেখানে এই মেয়েটিকে দেখা যায়নি। 

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের কন্যা সম্পর্কে খুব কম তথ্যই জানা যায়। বহু বছর ধরে চলা জল্পনা-কল্পনার পর ২০২২ সালে তার প্রথম জনসমক্ষে আসার মধ্য দিয়ে কিম কন্যার অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়। 

২০১৩ সালে পিয়ংইয়ং সফরের সময় মার্কিন বাস্কেটবল তারকা ডেনিস রডম্যান প্রথম কিমের শিশুকন্যার কথা প্রকাশ করেন। সে সময় দ্য গার্ডিয়ান-কে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তাদের শিশু জু আয়েকে কোলে নিয়েছিলাম এবং (কিমের স্ত্রী) মিসেস রি-এর সঙ্গেও কথা বলেছিলাম।’

তবে তার সঠিক বয়স ও জন্মসাল নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। রডম্যানের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা হয়, জু আয়ের বয়স বর্তমানে ১২ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে। তবে রডম্যান যখন কিম পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তখন শিশুটির সঠিক বয়স কত ছিল, তা স্পষ্ট নয়।

কিম জু আয়েকে ২০২২ সালে প্রথমবার বিশ্বের সামনে আনা হয়—সে সময় তিনি তার বাবার সঙ্গে একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) উৎক্ষেপণ তদারকি করেন। পরের বছরও তাকে একাধিকবার জনসমক্ষে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামরিক অনুষ্ঠানে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের এক সামরিক কুচকাওয়াজ, যেখানে তিনি সারি সারি আইসিবিএম-এর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

কিম পরিবারের রাজবংশের গুরুত্ব বিবেচনায় কন্যার জনসমক্ষে আগমন তাকে উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে কি না—এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতভেদ রয়েছে।

কেউ কেউ মনে করছেন, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে তাকে ‘প্রিয়’ ও ‘শ্রদ্ধেয়’ বলে বর্ণনা করা তার বিশেষ মর্যাদার ইঙ্গিত। তাদের মতে, ছোটবেলা থেকেই সামরিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ১৩ লাখ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের বাস্তবতা বোঝা এবং সৈন্যদের আস্থা অর্জনের প্রস্তুতির অংশ হতে পারে।

তবে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, কিম জং উনের অন্য দুই সন্তানই উত্তরসূরি হওয়ার সম্ভাবনায় বেশি আলোচনায় ছিলেন।

তবে স্টিমসন সেন্টারের সিনিয়র ফেলো ও কোরিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক জেনি টাউন বলেন, কিম কন্যার জনসমক্ষে আগমন একটি জনসংযোগ কৌশলও হতে পারে। এর মাধ্যমে কিমকে ‘পারিবারিক ব্যক্তি’ বা ‘পিতা-সুলভ’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

সুত্রঃ সিএনএন

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *