বনসাই করে রাখা শিক্ষাব্যবস্থা বিলুপ্ত চাই!

মিয়া সুলেমান, ময়মনসিংহ থেকে

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাদ দিলে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন বোর্ড-নিয়ন্ত্রিত (সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া) শিক্ষার মান এমন পর্যায়ে নেমে এসেছে যে শিক্ষার্থীরা শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় দিন পার করছে। আলিয়া মাদ্রাসা থেকে শুরু করে প্রান্তিক কলেজগুলো—সবখানেই একই করুণ চিত্র।

অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষার্থীদের কারও কাছে শিক্ষকের নাম জানতে চাইলে তারা নীরব। আবার চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র দুজন Honours শব্দটির সঠিক বানান করতে পারে। এমপিওভুক্ত গ্রামীণ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অবস্থা আরও শোচনীয়—তারা নিজেদের শ্রেণির ইংরেজি নামটিও জানে না। ডিগ্রি পাস কোর্সের পরীক্ষার্থীদের একটি রুমে ৪০ জনের মধ্যে ১৮ জনকে সন্তানসম্ভবা অবস্থায় পাওয়া গেছে। মাতৃত্বকে শ্রদ্ধা জানানো হলেও পড়াশোনার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। একইভাবে মাধ্যমিক স্তরে বাল্যবিয়ের বিস্তার ভবিষ্যৎ শিক্ষাকে ধ্বংস করছে।

এই চিত্র দেখে প্রশ্ন জাগে—দোষ কার? শিক্ষার্থীর? মোটেও না। দায়ী হচ্ছে সেই কর্তৃপক্ষ যারা বছরের পর বছর ধরে শিক্ষাকে বনসাই করে রেখেছে। সহস্রাধিক প্রতিষ্ঠানে “শিশু পলিসি”র নামে ভর্তি চললেও শিক্ষার্থীসুলভ মেধা বা জ্ঞানের কোনো বিকাশ ঘটছে না।

সরকার আসে, সরকার যায়। চমৎকার বক্তৃতা দেয়, পত্রিকায় বড় বড় প্রতিশ্রুতি ছাপে, কিন্তু বাস্তবে শিক্ষা মানোন্নয়নের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয় না। আজ পর্যন্ত কেউ বলেনি—প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে মানসম্মত করে গড়ে তুলতে হবে, গরীবদের সন্তানদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু মাত্র ৭০২ টাকা খরচ করা হয়, অথচ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষার চিত্রও এক।

প্রশ্ন জাগে—কোন শিক্ষাব্যবস্থা আমরা চাই? এমন এক ব্যবস্থাই কি যেখানে ডিগ্রি আছে, কিন্তু জ্ঞান নেই? সার্টিফিকেট আছে, কিন্তু দক্ষতা নেই? আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যেন একটি বনসাই গাছ—বড় হওয়ার সব যোগ্যতা আছে, কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হয়েছে।

এখনই সময় প্রতিবাদ করার। সময় এসেছে বনসাই করে রাখা শিক্ষাব্যবস্থা বিলুপ্ত করার। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ, দেশের ভবিষ্যৎ—দুটিই বাঁচাতে হলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *