প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠবেন কীভাবে

সকালে উঠে জিমে যাব, বই পড়ব আর কিছু না হলে এক কাপ চা তো বানানোই যাবে। এসব পরিকল্পনা ভাবনায় থাকলেও বাস্তবে অ্যালার্ম বাজলে সেটা বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়েন বেশির ভাগ মানুষ। সকালে কেন ঘুম থেকে উঠতে চাই? সহজ এই প্রশ্নের উত্তরটা কিন্তু জটিল। মোদ্দা কথা হলো, সকাল ৫টায় ওঠা সহজ কর্ম না। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আপনার পুরো জীবনযাপন পদ্ধতি।

ভোরে ওঠার পেছনে থাকতে হবে লক্ষ্য

প্রতিদিনের কঠিন কাজগুলোর একটি হলো সবার আগে ঘুম থেকে ওঠা। যদি এর পেছনে কোনো কারণ বা লক্ষ্য না থাকে, তাহলে সেটা করা প্রায় অসম্ভবই হয়ে পড়ে। সকালে উঠে কার্যকর কিছু করার পরিকল্পনা না থাকলেই সমস্যা। এই কাজগুলো আবার দৈনন্দিন কাজ হলে হবে না। আপনার জীবনের বড় কোনো উদ্দেশ্যের অংশ হতে হবে সকালে ঘুম থেকে ওঠা। এমন কোনো লক্ষ্য আগে থেকেই যদি থাকে, ভালো। না থাকলে ‘৫ কেন’ পদ্ধতিতে ধাপে ধাপে নিজের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে বের করতে পারেন।

কীভাবে করবেন?

১. প্রথমে একটা সমস্যা বা লক্ষ্য ঠিক করুন। যেমন: আমি প্রতিদিন ভোর ৫টায় উঠতে চাই।২. এরপর নিজেকে প্রশ্ন করুন: কেন আমি ৫টায় উঠতে চাই?৩. যে উত্তর পাবেন, সেটিকে আবার প্রশ্ন করুন: কেন?৪. এভাবে পাঁচবার বা তার বেশি নিজেকে ‘কেন’ প্রশ্ন করে যান।

উদাহরণ হিসেবে এভাবে নিজের সঙ্গে বোঝাবুঝি করে নিতে পারেন—: আমি ভোর ৫টায় উঠতে চাই।: কেন?: কাজের জন্য আরও বেশি সময় পাব।: কেন কাজের জন্য বেশি সময় দরকার?: লেখালেখি করতে চাই।: কেন?: বই লিখতে চাই।: কেন বই লিখতে চাও?: সৃষ্টিশীল পেশায় কাজ করতে চাই।: কেন?: কারণ, আমি মনে করি, মানুষের জীবনে পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা আসে এমন কাজ থেকে, যেটা সে করতে ভালোবাসে।এই বিশ্লেষণ আপনাকে কিছুটা হলেও বুঝতে সহায়তা করবে, আপনি যা করতে চাচ্ছেন, তার পেছনে আসল কারণ কী। সেই উদ্দেশ্য যদি সকাল ৫টার সময় ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে যায়, তাহলে আপনি প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার প্রেরণা খুঁজে পাবেন।

ভেবেচিন্তে দেখুন, কী হারাচ্ছেন, কী পাচ্ছেন

সকাল ৫টার সময় উঠতে হলে রাতে ঘুমাতে হবে তাড়াতাড়ি। এর জন্য হয়তো মাঝেমধ্যে দাওয়াত খেতে পারবেন না, টিভিতে কোনো সিরিয়াল থাকলে দেখতে পারবেন না। বরং অন্যভাবে ভেবে দেখুন, কী পেতে পারেন। নিজের জন্য নিঃশব্দ, নিরবচ্ছিন্ন সময় পাবেন। লিখতে পারেন, ছবি আঁকতে পারেন, নতুন ব্যবসার পরিকল্পনাও করতে পারেন। ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স সবচেয়ে সক্রিয় থাকে—মানে, এই সময়টাই সৃজনশীল কাজের জন্য একদম আদর্শ। আমি নিজেও দেখেছি, সকালবেলায় লেখা অনেক দ্রুত হয়। বিখ্যাত অনেক লেখকের লেখালেখির সময় লক্ষ করলে দেখবেন, তাঁরাও ওই সকালেই লেখেন।

ঘুমের সময় ঠিক করুন

ভোরে ওঠার অভ্যাস গড়ার জন্য রাতে ৮ ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন। যদি ৫টায় উঠতে চান, তাহলে রাত ৯টায় ঘুমানো শুরু করুন। প্রথম দিনই ৫টায় উঠতে পারবেন না। প্রতিদিন একটু একটু সময় আগান। এক সময় দেখবেন অ্যালার্ম ছাড়াই ঘুম ভাঙবে একদম ঠিক সময়ে।

একসঙ্গে সব পাল্টানোর চেষ্টা করবেন না

একসঙ্গে অনেক কিছু পাল্টানোর চেষ্টা করলে বেশির ভাগ সময় কোনোটাই হয় না। ঘুমের সময় পাল্টানো কিন্তু বিশাল একটা পরিবর্তন। প্রথমে কিছুদিন শুধু ভোরে ওঠাটাই অভ্যাস করুন। ধীরে ধীরে বাকি কাজগুলো যোগ-বিয়োগ করুন। প্রথমে ৩০ মিনিট কিছু করুন। তারপর এক ঘণ্টা। এভাবে ধীরে ধীরে সময় বাড়ান। শুরুতে সকালটা উপভোগ করুন। কখনো যদি ইচ্ছে করে, কাজ করুন। সকালের অংশটা সত্যিই যদি কাজে লাগাতে চান, সময় অপচয় করতে আপনার মনও এক সময় আর সায় দেবে না। তখন নিজেই বলবেন, ‘এত ভোরে উঠছি, এর একটা উদ্দেশ্য তো আছে?’

নিজের মতো সকাল

ধ্যান, হালকা যোগব্যায়াম, নিজের হাতে চা বানানো—যেকোনো কাজ দিয়েই শুরু করা যায় সকাল। প্রতিটি রুটিন থেকেই আলাদা উপকার পাবেন। কিন্তু লক্ষ থাকবে একটাই—শরীরকে শেখানো, ‘ঘুম ভাঙার পর এখন কী করব।’

উদ্দীপকহীন শোবার ঘর

আপনি যদি সত্যিই সকালটাকে উপযোগী করে তুলতে চান, তাহলে ঘুমানোর সময় ফোন এবং টেলিভিশন সঙ্গে রাখা যাবে না। একটা নিরুপদ্রব ঘুমের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ঘুমানোর ঘরটা যতটা সম্ভব নিরুদ্দীপক রাখুন। ঘুমানোর আগে, ঘুম ভাঙার পরে, উত্তেজনা তৈরি করবে, এমন কোনো উদ্দীপক আশপাশে রাখা যাবে না।

ধারাবাহিকতা

ঘুম থেকে ওঠার বিষয়টিতে ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। ছুটির দিনে অনেকক্ষণ ঘুমালে সেটা ধারাবাহিক রুটিনে সমস্যা তৈরি করে। সমাধান হচ্ছে, এক ঘণ্টা বেশি ঘুমানো। এরপর উঠে পড়ুন। শোবার ঘরটি যেন ঘুমের উপযোগী হয়, খেয়াল রাখুন সেদিকে। মৃদু আলো, শান্ত পরিবেশ এবং ঠান্ডা তাপমাত্রা—এই তিনটি বিষয় ঘুমের জন্য জরুরি। চাইলে কানে ইয়ার প্লাগ, চোখে কালো পর্দা পরুন। জরুরি কল ছাড়া ফোনের সব নোটিফিকেশনও বন্ধ রাখুন। পাশাপাশি মনে রাখুন রাতের বেলা স্ক্রিনের আলো যেমন ঘুমে বাধা তৈরি করে, সকালে সূর্যের আলো ঘুম ভাঙাতেও ঠিক ততটাই সহায়ক। সকালবেলার সূর্যের আলো শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে সজাগ করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি সকালবেলায় উঠতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন।

রাতের প্রস্তুতি

যারা রাতজাগা মানুষ, সকালবেলা তাদের ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সকালের কাজ রাতেই সেরে ফেলুন এ কারণে। রাতেই জামাকাপড় গুছিয়ে রাখুন, পরের দিনের খাবার তৈরি করে ফেলুন, কিংবা সকাল বেলা জিমের বদলে বিকেলে ব্যায়ামের রুটিন করুন।

দুপুরের পর ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন

দুপুরের পরপর একটি এসপ্রেসো চাঙ্গা করে দিতে পারে ঠিকই, তবে রাতের ঘুমে তা বড় বাধাও হতে পারে। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৮ ঘণ্টা আগে ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা উচিত। মানে যদি ১০টায় ঘুমাতে চান, তাহলে বেলা ২টার পর আর কফি নয়।

সূত্র: মিডিয়াম

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *