পুতিন ইউক্রেনের আরও ভূখণ্ড চান, সমঝোতার পরামর্শ ট্রাম্পের

গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ইউক্রেনের উচিত সমঝোতায় আসা—এমন পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার আলাস্কায় ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, “রাশিয়া একটি বিশাল শক্তি, ইউক্রেন তা নয়।”

রয়টার্সের একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনেৎস্ক প্রদেশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করেন। বিনিময়ে জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলে সামরিক অভিযান ‘স্থগিত রাখার’ প্রস্তাব দেন। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার দখলে রয়েছে, যার মধ্যে দনেৎস্কের তিন-চতুর্থাংশ অন্তর্ভুক্ত।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের কাছে উপস্থাপিত শান্তি প্রস্তাবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির শর্ত ছিল দনেৎস্ক অঞ্চল ছাড়ার বিষয়টি। যদিও বৈঠকের আগে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ছাড়া কোনো সমঝোতায় সন্তুষ্ট হবেন না বলে জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, “রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার একমাত্র কার্যকর উপায় হলো সরাসরি শান্তিচুক্তি, কেবল যুদ্ধবিরতি নয়।”

জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া

জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধ না হলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ড বন্ধ করাই যুদ্ধ থামানোর মূল শর্ত।” আগামী সোমবার তিনি ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের বৈঠকে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স প্রকাশ্যে জেলেনস্কির সমালোচনা করেছিলেন। এবার আলোচনায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের সম্ভাবনার কথাও ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পের মধ্যস্থতার উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও কিয়েভকে সমর্থন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করার ঘোষণা দিয়েছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল জানিয়েছেন, সোমবারের বৈঠকে ইউরোপীয় নেতারাও যোগ দিতে পারেন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থানকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন।

মস্কোর অবস্থান

পুতিন বৈঠক নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তার সহযোগী ইউরি উশাকভ জানিয়েছেন, কোনো ত্রিপাক্ষিক বৈঠক নিয়ে আলোচনা হয়নি। রুশ প্রেসিডেন্ট আগের মতোই ইউক্রেনকে ন্যাটোর বাইরে রাখার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেন, ভূখণ্ড হস্তান্তর ও ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনায় তিনি ও পুতিন “মোটামুটি একমত” হয়েছেন। তার ভাষায়, “আমরা চুক্তির খুব কাছাকাছি এসেছি। তবে ইউক্রেনকে এতে রাজি হতে হবে।”

প্রেক্ষাপট

রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে। ধীরে ধীরে রুশ সেনারা অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী এই সংঘাতে ইতিমধ্যেই উভয় পক্ষের লাখো মানুষ হতাহত হয়েছেন।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *