পুতিনের সঙ্গে শিগগিরই বৈঠকের ইঙ্গিত ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে “খুব শিগগিরই” বৈঠক করতে পারেন। বুধবার (স্থানীয় সময়) হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ কথা বলেন।

ট্রাম্প বলেন, “খুব শিগগিরই একটি বৈঠক হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।” তিনি এও জানান, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও বৈঠকে বসতে পারেন, তবে বৈঠকটি কোথায় অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি।

সূত্র জানায়, ট্রাম্প, জেলেনস্কি এবং ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে— ব্রিটেন, জার্মানি ও ফিনল্যান্ডের নেতাদের সঙ্গে একটি কনফারেন্স কলে অংশ নেন যেখানে সম্ভাব্য বৈঠকের বিষয়ে আলোচনা হয়।

আগামী সপ্তাহেই বৈঠক হতে পারে

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এবং সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প আগামী সপ্তাহেই পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন এবং পরে পুতিন ও জেলেনস্কিকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে তার।

এ বৈঠকের প্রেক্ষাপটে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মস্কো সফর। বুধবার তিনি রুশ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন, যেটিকে ক্রেমলিন “গঠনমূলক” বলে উল্লেখ করেছে। এরপর ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লেখেন, “দারুণ অগ্রগতি হয়েছে!” এবং জানান, ইউরোপীয় মিত্রদের বিষয়টি অবহিত করেছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “সবাই একমত যে এই যুদ্ধ শেষ হওয়া উচিত এবং আমরা আগামী দিন ও সপ্তাহগুলোতে এ লক্ষ্যে কাজ করব।”

তবে এর কিছুক্ষণ পরেই একজন মার্কিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, “দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা” এখনও কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে আগামী দুই দিনের মধ্যে।

যুদ্ধ থামাতে মস্কোর প্রস্তাব

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, উইটকফ মস্কো থেকে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে ফিরেছেন, যা এখন ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তবে তিনি ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের সময়সীমা নিয়ে সতর্কতা প্রকাশ করে বলেন, “এখনো অনেক কাজ বাকি,” সম্ভবত এতে “সপ্তাহও লাগতে পারে।”

ট্রাম্প অনেক আগেই দাবি করেছিলেন, ক্ষমতায় ফিরলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। এবার তিনি রাশিয়াকে শুক্রবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন শান্তির পথে অগ্রগতি দেখাতে, নইলে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

আলোচনা থেমে, হামলা বেড়েছে

ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনার তিনটি রাউন্ড এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। দুই দেশের দাবির ফারাক এখনো অনেক।

এদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বৃদ্ধি করেছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রগতি জোরদার করছে। ইউক্রেনের জরুরি বিভাগ জানিয়েছে, বুধবার দক্ষিণাঞ্চলীয় জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে রুশ গোলাবর্ষণে অন্তত দুইজন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন।

পারমাণবিক উত্তেজনা বাড়ছে

মস্কো-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক বর্তমানে উত্তেজনাপূর্ণ। ট্রাম্প জানিয়েছেন, রুশ নেতা দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে অনলাইন তর্কের পর তিনি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন ওই অঞ্চলে পাঠিয়েছেন।

এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া ঘোষণা করেছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ওপর স্বেচ্ছা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে। রাশিয়ার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্ট্রাইক রেঞ্জে’ এমন অস্ত্র মোতায়েনের জবাবে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রাশিয়ার শর্ত ও কিয়েভের প্রত্যাখ্যান

রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যদি যুদ্ধ বন্ধ চায়, তবে তাদের আরও অঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন ত্যাগ করতে হবে।

অন্যদিকে, কিয়েভ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এখনই হামলা বন্ধ করতে হবে। জেলেনস্কি সম্প্রতি তার মিত্রদের প্রতি মস্কোয় “শাসন পরিবর্তন” আনতে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *