পিআর পদ্ধতির পক্ষে ৭১ শতাংশ, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকার বিপক্ষে ৮৯ শতাংশ মানুষ

নিউজ ডেস্ক (গণমঞ্চ)-

জাতীয় সনদ চূড়ান্তকরণে জনমত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ জরিপের ফল উপস্থাপন করা হয়।

জরিপে দেখা যায়, জাতীয় সংসদ (নিম্নকক্ষ) ও সিনেট (উচ্চকক্ষ) নিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে মত দিয়েছেন অংশগ্রহণকারীদের ৬৯ শতাংশ। উচ্চকক্ষে আসন বণ্টনে আনুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) পক্ষে ৭১ শতাংশ এবং একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিধানের পক্ষে ৮৯ শতাংশ সমর্থন জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৩ সালে রাজনৈতিক ঐক্যমত সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি খসড়া জাতীয় সনদ প্রণয়ন করে সুজন, যা নিয়ে জনসচেতনতা তৈরির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এই সনদ চূড়ান্ত করতে সারাদেশে ১৫টি সংলাপের আয়োজনের পাশাপাশি মে থেকে জুন মাসে ৪০টি প্রশ্ন নিয়ে জনমত যাচাই জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে অংশ নেন ১ হাজার ৩৭৩ জন — এর মধ্যে ১ হাজার ৩৩ জন পুরুষ, ৩৩৫ জন নারী এবং ৫ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জিল্লুর রহমান। বক্তব্য দেন জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। জরিপের ফল উপস্থাপন করেন সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য মো. একরাম হোসেন।

আইনসভা সংস্কার বিষয়ে জরিপে নিম্নকক্ষে নারীদের জন্য ১০০টি সংরক্ষিত আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৬৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। নিম্নকক্ষে বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগের পক্ষে ৮৬ শতাংশ, সিনেটে নারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসনের পক্ষে ৬৯ শতাংশ, উচ্চকক্ষে বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগের পক্ষে ৮২ শতাংশ এবং একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান — তিনটি পদে একসঙ্গে না থাকার বিধানের পক্ষে ৮৭ শতাংশ সমর্থন দেন।

শাসন পদ্ধতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৭ শতাংশ। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য নির্বাচকমণ্ডলী (ইলেক্টরাল কলেজ) গঠনের পক্ষে ৮৬ শতাংশ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির পক্ষে ৮৮ শতাংশ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের পক্ষে ৮৭ শতাংশ এবং রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’, ‘সামাজিক সুবিচার’, ‘গণতন্ত্র’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও সম্প্রীতি’-র পক্ষে ৯০ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন।

মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে এর পরিধি বৃদ্ধির পক্ষে ৮৮ শতাংশ, শর্তহীন করার পক্ষে ৮৪ শতাংশ এবং সাংবিধানিক পদ ও তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগে সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের পক্ষে ৮০ শতাংশ সমর্থন দেন। দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন ও প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতির পক্ষে মত দিয়েছেন ৯০ শতাংশ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে ৮৩ শতাংশ।

নির্বাচনী সংস্কারে, নির্বাচনকালে নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্তে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ চান ৮৪ শতাংশ, নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সুষ্ঠুতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রত্যয়ন প্রকাশের পক্ষে ৮৬ শতাংশ, নির্বাচনী ব্যয় নিরীক্ষার পক্ষে ৮৮ শতাংশ এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসী, দুর্নীতিগ্রস্ত, চাঁদাবাজ ও সাজাপ্রাপ্তদের রাজনৈতিক দলে যোগদানে অযোগ্য ঘোষণার পক্ষে ৯২ শতাংশ মত দিয়েছেন। এছাড়া পূর্ববর্তী নির্বাচনের অনিয়মের তদন্ত চান ৭৯ শতাংশ, প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধন চান ৮৭ শতাংশ, ‘না ভোট’ পুনঃপ্রবর্তনের পক্ষে ৮৩ শতাংশ এবং জাতীয় ডেটা নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ গঠনের পক্ষে ৮৮ শতাংশ সমর্থন দিয়েছেন।

রাজনৈতিক দল সংস্কারে পাঁচ বছর পর দলের নিবন্ধন নবায়নের পক্ষে ৭৬ শতাংশ, দলীয় আর্থিক লেনদেনে ব্যাংকিং চ্যানেল ও অডিট হিসাব প্রকাশের পক্ষে ৯১ শতাংশ, গোপন ভোটে নির্বাচিত মনোনয়ন প্যানেল থেকে প্রার্থী মনোনয়নের পক্ষে ৮৩ শতাংশ, সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ৮৫ শতাংশ, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন ও বিদেশী শাখা না থাকার পক্ষে ৮০ শতাংশ এবং স্থায়ী স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের পক্ষে ৯০ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের পক্ষে ৮৮ শতাংশ, শক্তিশালী স্থানীয় সরকারের পক্ষে ৮৪ শতাংশ, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রবর্তনের পক্ষে ৮৫ শতাংশ, উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের পক্ষে ৮১ শতাংশ এবং স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের পক্ষে ৯০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মত দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *