মাওঃ শামীম হুসাইন কেরানীগঞ্জ থেকে
মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রহস্যগুলির একটি হলো জীবনের উৎপত্তি। আমরা কোথা থেকে এসেছি? জীবন কিভাবে শুরু হলো? বিজ্ঞানীরা বহু শতাব্দী ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, আধুনিক বিজ্ঞানের সর্বশেষ আবিষ্কার এবং গবেষণা প্রমাণ করে দিচ্ছে যে জীবনের মূল ভিত্তি পানি। আর ১৪০০ বছরেরও বেশি আগে কোরআন এই সত্যটি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে— وَجَعَلْنَا مِنَ ٱلْمَآءِ كُلَّ شَىْءٍ حَىٍّۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ “আমি পানি থেকে সমস্ত জীবন্ত জিনিস সৃষ্টি করেছি। তবে কি তারা ঈমান আনবে না?” (সূরা আম্বিয়া ২১:৩০)
কোরআনের দৃষ্টিতে জীবনের উৎপত্তি
কোরআন একাধিক স্থানে জীবনের সূচনা ও টিকে থাকার জন্য পানির অপরিহার্যতার কথা বলেছে:
“আল্লাহ পানি থেকে প্রত্যেক জীবকে সৃষ্টি করেছেন। তাদের কেউ পেটে চলে, কেউ দুই পায়ে চলে, আর কেউ চার পায়ে চলে।”সূরা আন-নূর (২৪:৪৫) এখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে প্রাণী, মানুষ, এমনকি অণুজীব—সব কিছুর সূচনা পানির সাথে যুক্ত।
“আর তিনিই পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে রক্তের সম্পর্ক ও বিবাহের সম্পর্কের যোগসূত্র দিয়েছেন।” সূরা ফুরকান (২৫:৫৪) মানুষ নিজেই পানির মাধ্যমে সৃষ্ট, যা আধুনিক জেনেটিক্স এবং মানব ভ্রূণতত্ত্বের সাথে মিলে যায়।
হাদিসে পানির গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ ﷺ পানিকে শুধু জীবনের উৎপত্তি নয়, বরং পবিত্রতার মাধ্যম এবং জীবনের ধারক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এক হাদিসে এসেছে:“আল্লাহর আরশ ছিল পানির ওপর।” (বুখারি, হাদিস ৩১৯১) এটি নির্দেশ করে যে পানির অস্তিত্ব পৃথিবী ও জীবন সৃষ্টির অনেক আগেই ছিল।
আরেক হাদিসে তিনি বলেছেন: “পানি পবিত্র ও পবিত্রকারী।” (তিরমিজি, হাদিস ৬৬)
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে জীবনের সূচনা
আধুনিক বিজ্ঞান কোরআনের এই ঘোষণাকে সমর্থন করছে।
সেল থিওরি (Cell Theory)
প্রতিটি জীবন্ত সত্তার মূল একক হলো কোষ। আর প্রতিটি কোষের ভেতর প্রায় ৭০–৮০% পানি।
পানি ছাড়া কোষের কোনো গঠন সম্ভব নয়।
RNA World Hypothesis
বিজ্ঞানীরা মনে করেন প্রথম জীবনের সূচনা হয়েছিল প্রাচীন মহাসাগরে, যেখানে জৈব অণুগুলো পানির মাধ্যমে মিলিত হয়ে RNA এবং DNA-এর মতো জটিল জীবাণু তৈরি করেছিল।
অ্যাস্ট্রোবায়োলজি (Astrobiology)
মহাকাশ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এখন অন্য গ্রহে পানি খোঁজার প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। কারণ তারা জানেন—“No Water, No Life” (পানি নেই, জীবন নেই)।
বাস্তব উদাহরণ
মানব শরীর: আমাদের শরীরের প্রায় ৬০–৭০% পানি।
গর্ভধারণ: ভ্রূণ গড়ে ওঠে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড নামক পানির আস্তরণের মধ্যে।
জীববৈচিত্র্য: পৃথিবীর ৯৭% প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন পানির সাথে সম্পর্কিত।
প্রাচীন সভ্যতা: নীল নদ, টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস, সিন্ধু—সব মহান সভ্যতার জন্ম হয়েছে পানির উৎসের পাশে।
কোরআন ও বিজ্ঞানের সামঞ্জস্য
কোরআন বলছে: সব জীবের উৎপত্তি পানি থেকে।
বিজ্ঞান বলছে: জীবনের জন্য পানি অপরিহার্য, প্রথম কোষ মহাসাগর থেকে তৈরি।
এই মিল স্পষ্ট প্রমাণ করে যে কোরআনের জ্ঞান মানুষের সৃষ্টি নয়, বরং সর্বশক্তিমান আল্লাহর পক্ষ থেকে।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা
১. পানি আল্লাহর নিআমত—তাকে অপচয় করা হারাম।
২. পানি ছাড়া জীবন কল্পনাই করা যায় না, তাই এটি সংরক্ষণ করা ইসলামী দায়িত্ব।
৩. পানির মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে স্মরণ করাচ্ছেন তাঁর সৃষ্টিশীল ক্ষমতা ও মহত্ত্ব।
“পানি থেকে জীবনের উৎপত্তি”—এটি শুধু বৈজ্ঞানিক সত্য নয়, বরং একটি ঐশী ঘোষণা। কোরআন আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে যেই সত্য প্রকাশ করেছিল, আধুনিক বিজ্ঞান এখন তা স্বীকার করছে। তাহলে কি মানুষ অস্বীকার করতেই থাকবে? أَفَلَا يُؤْمِنُونَ– “তবে কি তারা ঈমান আনবে না?”