নেতানিয়াহুর গাজা পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তেল আবিবে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ, জিম্মিদের মুক্তির দাবি

গণমঞ্চ ডেস্ক-

প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নতুন গাজা যুদ্ধ পরিকল্পনার প্রতিবাদে এবং জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে শনিবার রাতভর তেল আবিবের রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ।

এর আগের দিন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানায়, নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা — যা উচ্চপদস্থ কয়েকজন মন্ত্রীর একটি ছোট দল — গাজা সিটি দখলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত গাজায় সামরিক অভিযানের ব্যাপক বিস্তার ঘটাবে, যদিও এর বিরোধিতা করছে জনসাধারণ এবং এমনকি সেনাবাহিনীও সতর্ক করে বলেছে, এতে জিম্মিদের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে।

“এটা শুধু সামরিক সিদ্ধান্ত নয়, এটা আমাদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষদের জন্য মৃত্যুদণ্ড হতে পারে,” বিক্ষোভে বলেন লিশাই মিরান লাভি, গাজায় আটক ওমরি মিরানের স্ত্রী। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তিনি হস্তক্ষেপ করে যুদ্ধ বন্ধ করেন।

জনমত জরিপে দেখা গেছে, বিপুল সংখ্যক ইসরায়েলি জনগণ যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করে বাকি প্রায় ৫০ জন জিম্মিকে মুক্ত করার পক্ষে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, গাজায় এখনও প্রায় ২০ জন জিম্মি জীবিত আছেন।

সরকারের যুদ্ধ সম্প্রসারণের ঘোষণায় দেশ-বিদেশে, এমনকি ইউরোপের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মধ্য থেকেও, ব্যাপক সমালোচনা উঠেছে। রবিবারের মধ্যে পূর্ণ মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যেসব জিম্মিকে মুক্ত করা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই কূটনৈতিক আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমে ফিরে এসেছে। জুলাইয়ে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে আরও জিম্মি মুক্তির আলোচনা ভেঙে পড়ে।

৬৯ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত রামি দার, যিনি তেল আবিবের উপশহর থেকে এসে বিক্ষোভে যোগ দেন, বলেন: “সরকার উগ্র হয়ে গেছে। তারা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে।” তিনিও ট্রাম্পকে আহ্বান জানান, যেন তিনি একটি জিম্মি মুক্তির চুক্তিতে চাপ দেন।

তেল আবিবে এ ধরনের বিক্ষোভ নিয়মিতই হচ্ছে। শনিবারের এই বিক্ষোভে ১ লক্ষাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা।

“আমি বিশেষজ্ঞ না, কিন্তু দুই বছর ধরে যুদ্ধ চলছে, তবুও কোনও সাফল্য দেখছি না,” বলেন ইয়ানা, ৪৫ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী, যিনি তার স্বামী ও দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। “আরও প্রাণহানি— ইসরায়েলি হোক বা গাজাবাসী— কী আদৌ কিছু বদলাবে?”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ১,২০০ মানুষকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে গাজায় নিয়ে যায়। সেই থেকে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে ৪০০-রও বেশি সেনা নিহত হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পতাকা হাতে এবং জিম্মিদের ছবি সংবলিত পোস্টার নিয়ে অংশ নেন। কেউ কেউ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে পোস্টার ধরেন, কেউ আবার ট্রাম্পকে নেতানিয়াহুকে থামাতে আহ্বান জানিয়ে স্লোগান দেন। কিছু অংশগ্রহণকারী গাজায় নিহত শিশুদের ছবিও প্রদর্শন করেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬১,০০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

প্রধানমন্ত্রীর জোটের কট্টরপন্থী মন্ত্রীরা গাজার পূর্ণ দখলের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। তবে সেনাবাহিনী হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এতে গাজায় থাকা জিম্মিদের জীবন বিপন্ন হতে পারে।

যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে থাকা কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ শনিবার নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে গাজার বৃহৎ অংশ দখলের দাবি জানান।

নেতানিয়াহু ফক্স নিউজকে বৃহস্পতিবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার পুরোটা নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়, তবে তারা ভূখণ্ডটি নিজেদের দখলে রাখতে চায় না।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, গাজা সিটি দখলের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তবে গাজার পুরো অংশে অভিযান চালানো হবে কি না— সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি।

৫৫ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষক তাল রয়টার্সকে বলেন, যুদ্ধ বিস্তৃত করা “ভয়াবহ” সিদ্ধান্ত হবে, যা আরও সৈনিক এবং জিম্মির প্রাণহানির কারণ হতে পারে।

“ওখানে আমাদের কিছু করার নেই। ওটা আমাদের নয়,” বলেন তিনি।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *