নিরাপত্তাহীন রাস্তাঘাটে প্রতিদিনই লুট হচ্ছে জীবন

মিয়া সুলেমান (ময়মনসিংহ প্রতিনিধি)

ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের সহিলাটি গ্রামের তরুণ তৌহিদ (২৬)। কর্মসংস্থানের স্বপ্ন বুকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্নপথেই মুখোমুখি হলেন এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের। নির্মম ছিনতাইকারীদের আক্রমণে রক্তাক্ত হয়ে এখন তিনি হাসপাতালের শয্যায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলার বড়পুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা তার পথরোধ করে, সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় এবং বর্বরভাবে কুপিয়ে আহত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন—তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর; উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র স্থানান্তরের প্রয়োজন হতে পারে।“আর কত তৌহিদ?”তৌহিদের পিতা আব্দুস সালাম অসহায় কণ্ঠে বললেন—“আমার একমাত্র ছেলেটা রোজগারের জন্য বের হয়েছিল। আজ সে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। আমরা কোথায় যাবো? কাকে বলবো আমাদের নিরাপত্তার কথা?”প্রতিবেশী বড় ভাই রোমান প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন—“প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই দাবি—আর কত তৌহিদের রক্ত ঝরলে আমরা নিরাপদ রাস্তাঘাট পাবো?”প্রতিদিনের আতঙ্ক, কারো না কারো সর্বনাশআজকের বাংলাদেশে রাস্তাঘাট যেন এক ভয়াল মৃত্যুকূপ। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে ছিনতাই, খুন, গুম কিংবা ডাকাতি। সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হলে আর নিশ্চিত হতে পারেন না—তিনি নিরাপদে ফিরতে পারবেন কি না। এই অনিশ্চয়তাই এখন প্রতিটি পরিবারের বুকে বিষের মতো ছড়িয়ে পড়েছে।

রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবিনাগরিকদের মৌলিক অধিকার হলো নিরাপত্তা। কিন্তু বাস্তবতা ভয়াবহ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি যতই প্রচারিত হোক, মানুষের বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে। তৌহিদের মতো অসংখ্য তরুণ, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, এমনকি পথচারী—প্রতিদিনই জীবন নিয়ে খেলছে কেবল রাস্তায় বের হওয়ার সাহস দেখানোর কারণে।সমাজের জন্য প্রশ্নবোধক চিহ্নতৌহিদের রক্তাক্ত দেহ শুধু একটি পরিবারের কান্না নয়—এটি পুরো সমাজের জন্য এক গভীর প্রশ্নবোধক চিহ্ন। যদি নিরাপদে চলাচল করাও আজ অনিশ্চিত হয়, তবে আমরা কেমন রাষ্ট্রে বাস করছি?

আজ তৌহিদ, কাল হয়তো অন্য কেউ। এই ধারাবাহিক রক্তপাত বন্ধে রাষ্ট্র ও সমাজের সম্মিলিত প্রতিরোধ ছাড়া কোনো পথ নেই।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *