গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –
১৮ মাস আগে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠিত নিউরালিংকের প্রথম মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপন পরীক্ষার অংশ হয়েছিলেন নোল্যান্ড আরবাগ। এখন তিনি জানিয়েছেন, এই পরীক্ষামূলক যন্ত্র তার জীবনকে বদলে দিয়েছে— দিয়েছে নতুন স্বাধীনতা ও লক্ষ্যবোধ।
৩১ বছর বয়সী আরবাগ ২০১৬ সালে সাঁতারের সময় দুর্ঘটনায় কাঁধ থেকে নিচের অংশ অবশ হয়ে যান। এরপর তার শরীরের নিচের অংশে আর কোনো নড়াচড়া বা অনুভূতি কাজ করেনি। ২০২৪ সালে তিনি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিউরালিংকের চিপ প্রতিস্থাপন করান। কয়েনের আকারের ওই যন্ত্রে এক হাজারেরও বেশি সূক্ষ্ম ইলেকট্রোড মস্তিষ্কের নিউরনের সঙ্গে যুক্ত হয়। এটির মাধ্যমে স্নায়ুর বৈদ্যুতিক সংকেত শনাক্ত করে তা ডিজিটাল কমান্ডে রূপান্তর করা যায়।
ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) প্রযুক্তির সাহায্যে এখন আরবাগ শুধুমাত্র চিন্তার মাধ্যমেই কম্পিউটারের কার্সর সরাতে পারেন, স্ক্রিনে লিখতে পারেন এবং বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন। তিনি প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত এই সিস্টেম ব্যবহার করেন— পড়াশোনা, বই পড়া, এমনকি মারিও কার্টের মতো ভিডিও গেম খেলার জন্যও। এছাড়া টেলিভিশন ও এয়ার পিউরিফায়ারের মতো ঘরোয়া যন্ত্রও তিনি এটি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন।
এই প্রযুক্তি তাকে নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। তিনি অ্যারিজোনার একটি কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হয়েছেন এবং ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করছেন। পাশাপাশি অর্থের বিনিময়ে বক্তব্য দেওয়ার কাজও করছেন। আরবাগ বলেন, “আমি মনে করি, আমি আবার সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছি। আসলে সবসময়ই সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু এখন আমি তা অর্থবহ উপায়ে পূরণ করতে পারছি।”
তবে পথচলা সহজ ছিল না। অস্ত্রোপচারের কিছুদিন পর যন্ত্রের কয়েকটি অতিসূক্ষ্ম সুতা মস্তিষ্কের টিস্যু থেকে সরে যায়, ফলে তিনি অনেক কার্যক্ষমতা হারান। সে সময় তিনি বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেননি। তার মতে, তা হলে এটি “অত্যন্ত হঠকারী সিদ্ধান্ত” হতো এবং প্রকল্পের প্রতি আস্থা নষ্ট করত। পরবর্তীতে নিউরালিংকের প্রকৌশলীরা যন্ত্রটি পুনঃসামঞ্জস্য করেন এবং কার্যক্ষমতা অনেকটাই ফিরে আসে।
প্রতিস্থাপনের আগে নিজের জীবনকে লক্ষ্যহীন মনে করতেন আরবাগ। তিনি বলেন, “সারারাত জেগে থাকতাম, দিনভর ঘুমাতাম। কাউকে বিরক্ত করতে চাইতাম না বা কারও পরিকল্পনা নষ্ট করতে চাইতাম না।” এখন তিনি মনে করেন, প্রযুক্তিটি তাকে নিয়ন্ত্রণ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছে— যদিও ঝুঁকিগুলো শুরু থেকেই পরিষ্কার ছিল। “আমি ভেবেছিলাম, এটা যদি কাজ না-ও করে, কিংবা কিছু ভয়ানক ঘটে যায়, তবুও এটা ভবিষ্যতে অন্য কারও কাজে আসবে।”
বর্তমান জীবন নিয়ে রসিকতা করে তিনি বলেন, প্রতিস্থাপিত যন্ত্র তাকে প্রযুক্তিগতভাবে “সাইবর্গ” বানিয়েছে। তবে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি যোগ করেন, “আমি এখনও নিজেকে সাধারণ মানুষই মনে করি।”
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নিউরালিংক বর্তমানে অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম, যারা ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছে। এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকলেও নোল্যান্ড আরবাগের অভিজ্ঞতা মানব মস্তিষ্ক ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সংযুক্তির সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ— দুটোই সামনে এনেছে।
সোর্সঃ বিজনেস টুডে