গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –
হিন্দুধর্ম নিয়ে এক মন্তব্যের জেরে ভারতের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেছেন এক আইনজীবী। সোমবার দিল্লির আদালতে এই ঘটনা ঘটান রাকেশ কিশোর নামের ওই আইনজীবী।
আদালতে উপস্থিত তিনজন আইনজীবী বিবিসিকে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তাদের একজন জানান, জুতাটি ‘প্রধান বিচারপতি এবং আরেকজন বিচারপতির গা ঘেঁষে পেছনে গিয়ে পড়ে।’
ঘটনার পর নিরাপত্তা কর্মকর্তারা রাকেশ কিশোরকে আদালত কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘সনাতন ধর্মের অপমান ভারত সহ্য করবে না।’ পরে তার লাইসেন্স স্থগিত করা হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাকেশ কিশোর জানান, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ সম্প্রতি হিন্দু দেবতা বিষ্ণুকে নিয়ে একটি মন্তব্য করে এক আবেদন খারিজ করে দেয়, যা তাকে ক্ষুব্ধ করে।
গত মাসে মধ্যপ্রদেশের একটি মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর সাত ফুট লম্বা একটি মূর্তি পুনঃস্থাপনের আবেদন খারিজ করে দেওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘এটি পুরোপুরি প্রচারের স্বার্থে করা মামলা… যান এবং দেবতাকে নিজেই কিছু করতে বলুন।’
এই মন্তব্যের পর তীব্র বিতর্ক শুরু হয় এবং অনেকে তার বিরুদ্ধে হিন্দু বিশ্বাসকে উপহাস করার অভিযোগ তোলেন। পরে প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) জানায়, সমালোচনার বিষয়টি উল্লেখ করে বিচারপতি গাভাই বলেন, তিনি ‘সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করেন’।
রাকেশ কিশোর বলেন, ‘তিনি (বিচারপতি) কেবল আবেদনটিই প্রত্যাখ্যান করেননি, ভগবান বিষ্ণুকে নিয়ে উপহাসও করেছেন।’ জুতা নিক্ষেপের ঘটনার পর তিনি বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিচারপতি গাভাই ওই মন্তব্য করার পর থেকে তিনি ‘ঘুমাতে পারছিলেন না।’
ঘটনার সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবী আনাস তানভির জানান, পুরোটা সময় প্রধান বিচারপতি গাভাই শান্ত ছিলেন। আরেকজন আইনজীবী রবি শঙ্কর ঝা বলেন, রাকেশ কিশোরকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর প্রধান বিচারপতি অন্য আইনজীবীদের বিচলিত না হয়ে তাদের যুক্তিতর্ক চালিয়ে যেতে বলেন।
প্রধান বিচারপতি এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। পরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানায় যে রাকেশ কিশোরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হবে না।
এই হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পিটিআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোদি বিচারপতি গাভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং জানান যে এই হামলায় প্রত্যেক ভারতীয় ক্ষুব্ধ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সমাজে এই ধরনের জঘন্য কাজের কোনো স্থান নেই।’ রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্য নেতারাও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।