ঢাকায় শুরু হচ্ছে সৌদি আরব-বাংলাদেশ বিজনেস সামিট

গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –

শক্তিশালী বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বিনির্মাণে ঢাকায় শুরু হতে যাচ্ছে সৌদি আরব-বাংলাদেশ বিজনেস সামিট। সৌদি আরব–বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএবিসিসিআই) আয়োজনে ৭ অক্টোবর রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে শুরু হবে এ সামিট। এতে অংশ নেবেন বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের ব্যবসায়ী, কোম্পানি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, নীতি নির্ধারকরা।

রোববার গুলশানে সামিটের লিড স্পনসর সিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সামিটের উদ্বোধন ও বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরেন এসএবিসিসিআইর সভাপতি আশরাফুল আলম চৌধুরী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী মহল অনেক আগেই সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এবার আমরা সেই মাইলফলক অর্জন করতে যাচ্ছি। আমরা ব্যবসায়ী মহল উপলব্ধি করি যে, বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি শক্তিশালী বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বিনির্মাণে এই যৌথ উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় আমি বিশ্বাস করি, সৌদি আরব বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বিকল্প বাজার হয়ে উঠবে। বিশেষত টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক, জনশক্তি রপ্তানি, তথ্যপ্রযুক্তি, ডিজিটাল ফাইন্যান্স, কৃষিপণ্য ও পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্যের বিশাল সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে সৌদি বাজারে উপস্থিতি বাড়াতে কাজ করছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মতো প্রচলিত বাজারের ওপর নির্ভরতা কমানো যায়। অনেক সময় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক প্রবৃদ্ধি কমে যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিদায়ী অর্থবছরে সৌদিতে আমাদের রপ্তানি ছিল ২৯ কোটি ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যা ছিল ৩১ কোটি ডলার। তৈরি পোশাক, টুপি, কৃষিপণ্যসহ নানা ধরনের পণ্য আমরা রপ্তানি করি। আমাদের দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ দুই বিলিয়ন ডলার প্রায়। সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশ সার, প্লাস্টিকের কাঁচামালা, স্বর্ণ, খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করে। বাংলাদেশের দক্ষ-অদক্ষ জনশক্তির সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব। বর্তমানে ৩০ লাখের বেশি বাংলাদেশি সৌদি আরবে বিভিন্ন কর্মে নিযুক্ত। দেশটিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি সরবরাহে প্রস্তুত-যেমন নার্স, প্যারামেডিক, ল্যাব টেকনিশিয়ান, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইটি বিশেষজ্ঞ, খাদ্য প্রযুক্তিবিদ, হসপিটালিটি সেক্টরের পেশাজীবী, নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট, অর্থ ও ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞ প্রভৃতি সম্ভাব্য সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

আশরাফুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও সৌদি আরব-উভয় দেশেই সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) অথবা যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে পেট্রোকেমিক্যাল, ক্রুড অয়েল রিফাইনারি, ইস্পাত, খাদ্যশিল্প, কৃষি রাসায়নিক, সার, টেক্সটাইল, বন্দর ব্যবস্থাপনা, গ্রিন টেকনোলজি, সাইবার সিকিউরিটি, আইটি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টরসহ নানা খাতে বিনিযোগ হতে পারে। বিশেষত চট্টগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সৌদি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত শিল্পভূমি তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ হয়ে উঠবে। সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নেও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হওয়ার সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সহসভাপতি ও গ্যালাক্সি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ বলেন, ‘সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের বাণিজ্যের বিরাট সম্ভবনা রয়েছে। সম্প্রতি সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিদেশি উদ্যোক্তারা, ব্যবসায়ীদের জন্য আইন পরিবর্তন করেছে। এটি আমাদের জন্য বিরাট একটি সুযোগ। সৌদি আরবে বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী এখন ব্যবসা করে যাচ্ছে। রিয়াদসহ ফ্রেশ ফল, সবজি ব্যবসায় বাংলাদেশিরাই নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া নানা পণ্যের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। কত সংখ্যাক বাংলাদেশি সৌদি আরবে মালিকানায় ব্যবসা করছে সেটা হয়তো বলতে পারবো না। তবে যে সামিট হতে যাচ্ছে সেখানে দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্পর্কে জোরদার করবে।’

বিজনেস সামিটে সৌদি আরবের ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন শেখ ওমর আব্দুল হাফিজ আমিরবকশ। তিন দিনের সামিটের প্রথম দিন (৬ অক্টোবর) সৌদি প্রতিনিধি দলের আগমন ও রিসিপশন ডিনার। ৭ অক্টোবর সকালে হোটেল শেরাটনে শুরু হবে। শেষ দিন ৮ আক্টবর বি টু বি মিটিং ও সৌদি প্রতিনিধি দলের বৈঠক করবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এসএবিসিসিআইর সদস্য ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী এবং সিটি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজবাউল আসিফ সিদ্দিকী।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *