ঢাকায় আইইএলটিএস প্রশ্নফাঁস চক্রের মূল হোতা গ্রেপ্তার

গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –

রাজধানীতে আন্তর্জাতিক ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষা আইইএলটিএস-এর প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূল হোতা মো. মামুন খান (৩৭) এবং তার সহযোগী পান্না পূর্ণিমা হালদার ওরফে কেয়া (২৬)-কে শনিবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

দীর্ঘমেয়াদি অনুসন্ধানে তথ্য-প্রমাণ মেলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলশানের নাড্ডায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। অভিযানে ৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা এবং ৮টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

পুলিশ জানায়, অভিযুক্তরা পরীক্ষার্থীদের হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করে, রাতেই ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দিয়ে উত্তর মুখস্থ করাত এবং পরদিন নির্দিষ্ট কেন্দ্রে পৌঁছে দিত। এতে শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত ব্যান্ড স্কোর পেতেও সক্ষম হয়।

তদন্তে উঠে এসেছে, এ চক্রটি ২০১৯ সাল থেকে সক্রিয় এবং কেমব্রিজ ইংলিশ, আইডিপি বাংলাদেশ ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের ভেতরের কিছু ব্যক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। পরীক্ষার্থীপ্রতি ফি ১.২৫ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হতো, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরীক্ষার পরপরই পরিশোধ করা হতো। এমনকি কিছু সরকারি কর্মকর্তাও এই সুবিধা নিয়েছেন।

অভিযানকালে জানা যায়, পরীক্ষার আগের দিন জুমার নামাজের পর শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে যাওয়া হতো। ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দের পর গভীর রাতে রাইটিং, রিডিং ও লিসনিং অংশের প্রশ্ন সরবরাহ করা হতো। শিক্ষার্থীরা সারারাত মুখস্থ করে পরদিন সকালে মাইক্রোবাস বা সিএনজি করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাত।

উত্তরার হোটেল অ্যাফোর্ড ইন, মতিঝিলের সেন্ট্রাল ইন এবং নাড্ডার ওয়েস্ট ভ্যালি সহ একাধিক হোটেল এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। একাধিক শিক্ষার্থী অর্থ প্রদান করে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে মিল পাওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।

এছাড়া, টিকে ফুড প্রোডাক্টস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড-এর কর্মকর্তা তারেক আজিজকে এ সিন্ডিকেটের একজন এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, কেমব্রিজ থেকে প্রশ্ন ফাঁসের জন্য তিনি ২.৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন।

প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি এডুকেশন বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে শনিবারের অভিযানে মামুন সাংবাদিককে আক্রমণ ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ তাকে আটকে ফেলে। রোববার দুজনকে আদালতে তোলা হলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আইইএলটিএস প্রশ্ন ফাঁস প্রমাণিত হলে বাংলাদেশের পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল হয়ে যেতে পারে। ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি এর দায় এড়াতে পারবে না, কারণ এ ধরনের ফাঁস অভ্যন্তরীণ সম্পৃক্ততা ছাড়া সম্ভব নয়।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু গ্রেপ্তার নয়, বরং ভেতরের যোগসাজশ শনাক্ত, সন্দেহজনক ফলাফলের অডিট এবং কোটি টাকার লেনদেনের উৎস অনুসন্ধান করেই এ চক্র ভাঙা সম্ভব।

সুত্রঃ ডেইলি সান

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *