গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –
ডিবি পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ।
বুধবার রাত ৯টার দিকে গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের দক্ষিণ পাশে লেগুনা স্ট্যান্ডের সামনে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তারের কথা জানান পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম।
গ্রেপ্তাররা হলেন- দ্বীন ইসলাম ওরফে কাউছার আহমেদ (৩৫), কামাল হাওলাদার (৩৫), আব্দুর রহমান হাওলাদার (৩৭), মেহেদী হাসান ওরফে হাসান (৩৮), বাবুল হাওলাদার (৩৮), রমিজ তালুকদার (৩৫) ও জান্নাতুল ফেরদৌস (২২)।
এসময় তাদের কাছ থেকে একটি মাইক্রোবাস, দুইটি ডিবি জ্যাকেট, দুইটি ওয়াকিটকি, একটি ভুয়া পুলিশ আইডি কার্ড, দুইটি হ্যান্ডকাফ, দুইটি খেলনা পিস্তল, দুইটি পকেট রাউটার, ছয়টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, ছয়টি ফিচার ফোন, এক্সপেন্ডেবল লাঠি ও লেজার লাইট উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ আলম বলেন, “চক্রটি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁতিবাজারে আসা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ও ব্যাংক থেকে বড় অংকের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করত। পরে ডিবি বা র্যাব সদস্য পরিচয়ে টার্গেট ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে ডাকাতি করত।”
গত ৪-৫ মাসে অন্তত ৭০ জন ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তারের ধারাবাহিকতায় গুলিস্তান থেকে এ সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপকমিশনার মাসুদ বলেন, ধরা পড়াদের সঙ্গে আরও ৪-৫ জন ছিল, তবে তারা কৌশলে পালিয়ে যায়। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে দ্বীন ইসলামের নামে দশটি, আব্দুর রহমান হাওলাদারের নামে তিনটি, মেহেদী হাসানের নামে চারটি, বাবুল হাওলাদারের নামে দুটি ও রমিজ তালুকদারের নামে চারটি ডাকাতি মামলা রয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ আলম বলেন, “তাঁতীবাজারে সারা দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরাই স্বর্ণ কেনাবেচা করতে আসেন। এছাড়া মতিঝিল-পল্টন এলাকায় ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমাণ লেনদেন হয়। এসব স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকে মোটা অংকের লেনদেন হলে চক্রটি তাদের পেইড সোর্সের মাধ্যমেই জেনে যেত।
“সাকসেসফুলি অপারেশন হলে টাকা ভাগাভাগির বড় অংশটিই ওই সোর্স পান। যারা বিভিন্ন ব্যাংকে ঘুরঘুর করে কোনো কাজ ছাড়াই। যখন কোনো ব্যক্তি মোটা অঙ্কের টাকা তুলে, তখনই তথ্যটা এই চক্রের কাছে দিয়ে দেয়।”
আইনশৃঙ্খলা পরিচয়ে ডাকাতি করতে যা যা লাগে, চক্রটির সবই ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের গাড়ি ছিল, হ্যান্ডকাফ, ওয়াকিটকি, পিস্তল, ডিবি বা র্যাবের জ্যাকেট, আইডিকার্ড থেকে শুরু করে তাদের সবই আছে। একেবারে প্যাকেজ।
“জনবহুল এলাকায় ডিবির জ্যাকেটসহ টার্গেট ব্যক্তিকে ওঠায়ে নেয়, নেওয়ার সময় বলা হয় টার্গেট ব্যক্তি কোনো মামলার আসামি। এমনভাবে লোকজনের সামনেই উঠিয়ে নিয়ে যায়, আসল মনে করে কেউ কিছু বলেও না। নেওয়ার পরে তার কাছে যা কিছু থাকে, এমনকি ব্যাংক থেকে বিকাশের মাধ্যমে সব টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর তাদেরকে কাচপুর বা ৩০০ ফিট এলাকার নির্জন কোনো স্থানে ফেলে দিয়ে চলে যায়।”
মাসুদ আলম বলেন, “তারা ইতোপূর্বেও বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। যেহেতু তাদের কাছে অনেক টাকা থাকে। গ্রেপ্তারের পর জামিনে বের হয়ে আবার একই ঘটনা ঘটাচ্ছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জামিন তো কোর্ট দেবে, জামিন পাওয়ার অধিকার সবার আছে। এটা নিয়ে আমাদের বলার সুযোগ নাই।”
এ চক্রে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সাবেক সদস্য জড়িত জানিয়ে উপ কমিশনার মাসুদ বলেন, তবে গ্রেপ্তার সাতজনের কেউই কোনো বাহিনীর নয়।
“বিভিন্ন বাহিনীর সাবেকদের সংখ্যাটা স্পেসিফিক বলা মুশকিল। তবে তাদের মধ্যে চাকরিচ্যুত সদস্যের সংখ্যাই বেশি। রানিং অফিসারদের কারও সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই।”
সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাসুদ আলম বলেন, “সবাই যদি একটু সচেতন থাকে, যারা এসেছে তারা আসল ডিবি বা র্যাব কি- না একটু যাচাই করা হয়; আশেপাশের লোকজন যদি একটু এগিয়ে আসেন, যদি কোনো থানা বা কোনো টিম জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে একটা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।”
কোনো এলাকায় যেকোনো আইনশঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হলে সাধারণত সেই এলাকার ওসি অবগত থাকেন। তাই সন্দেহজনক হলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন উপ কমিশনার মাসুদ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরঞ্জাম চক্রটি কীভাবে পাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এগুলো অ্যাভেইলএবল আছে। বিভিন্ন সোর্স থেকে তারা পেয়ে যায়।
“পুলিশের জন্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য যেটা আছে, সেটা বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই। কিন্তু তারা বাইরে থেকে সোর্সিং করে নিয়ে আসে।”