ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব পাঠ্যবই থেকে বাদ দিতে আইনি নোটিশ

গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –

২০২৬ সালের নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব বাদ দিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন রাজধানীর খিলক্ষেতের বাসিন্দা মো. আরিফ।

রবিবার (১৭ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন তার পক্ষে এই আইনি নোটিশ পাঠান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি। নোটিশ অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হাইকোর্টে রিট করবেন বলেও জানান এই আইনজীবী।

সারওয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষা কারিকুলামে ডারউইনের থিওরি মানবজন্মের বিবর্তনবাদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটা প্রফেসর জাফর সাহেব (জাফর ইকবাল) করিয়েছেন। গত আওয়ামী লীগের আমলে এটা ইনক্লুড করা হয়েছে। যেটা নিয়ে অনেক সমালোচনা ও বিতর্ক হয়েছে, সংসদে আলোচনা হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও, এমনকি ক্যাম্ব্রিজের কার্যক্রমসহ অনেক দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে এই বিবর্তনবাদ পড়ানো হয় না।”

তিনি বলেন, “বিবর্তনবাদ পড়ানো হলে কোমলমতি শিশুদের মনে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। সেজন্য ক্যামব্রিজের শিক্ষা কারিকুলামে মাধ্যমিক পর্যায়ে তারা এটা ইনক্লুড করেনি। আমরা সেজন্য জনস্বার্থে এডুকেশন সেক্রেটারিসহ সবার কাছে নোটিশ পাঠিয়েছি, যাতে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে এই বিবর্তনবাদ তত্ত্ব অন্তর্ভুক্ত করা না হয়।”

তিনি আরও বলেন, “তারা যদি আমাদের নোটিশের পরে পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হবো এবং তাদের বাধ্য করব দাবি পূরণের জন্য। আমরা মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করি যে আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) থেকে মানবজাতির জন্ম হয়েছে, যেটা ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে। আর এই বিবর্তনবাদে বলা হয়েছে, মানুষের সৃষ্টি হয়েছে বানর থেকে। এটা গবেষণার জন্য ইউনিভার্সিটি পর্যায়ে বা উচ্চপর্যায়ে পড়াতে পারে। কিন্তু মাধ্যমিক পর্যায়ে যেহেতু পৃথিবীর কোনো দেশে নাই, আমাদের দেশে এটা থাকা কোনোভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়, যেখানে ৯২% মুসলিম জনগোষ্ঠী। সেজন্যই আমরা জনস্বার্থে এই নোটিশ পাঠয়েছি।”

এদিকে, সাউথ ব্রিজ স্কুলের শিক্ষক আলফ্রেড ডি সিলভাও ক্যামব্রিজ কারিকুলামে ও-লেভেলে বিবর্তনবাদ তত্ত্ব পড়ানোর বিষয়টি সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাবিদ হাসান ডেনিজ ও লিসা বোর্গার্ডিংয়ের লেখা “ইভুলেশন এডুকেশন অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব” বইতে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রদেশে প্রাথমিক পর্যায়েই (১০ বছরের আগে) ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব পড়ানো হয়।

অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, গ্রিস, ইরান, কুয়েত, লুক্সেমবার্গ, মেক্সিকো, স্কটল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রদেশে ১০-১৩ বছরের শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এছাড়া ব্রাজিল, মিশর, গ্রিস, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিরিয়া, তিউনিশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রদেশে স্কুল লেভেলে (১৪ বছরের পর) বিবর্তনবাদ তত্ত্ব পড়ানো হয়।

প্রসঙ্গত, চার্লস ডারউইনের “অন দ্য অরিজিন অব স্পিসিস” বইটি প্রকাশিত হয় ১৮৫৯ সালে। এই গ্রন্থে তিনি বিবর্তনবাদকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেছেন, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে কোনো প্রাণী ক্রমাগত অভিযোজনের ফলে আপন পরিবেশের জন্যে বিশেষায়িত হতে হতে একসময় নতুন একটি প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়।

২০১৯ সালে প্রকাশিত সংবাদোধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চার্লস ডারউইনের আগেও ইসলামিক বিশ্বেও বিবর্তনবাদ তত্ত্বের আরও একজন প্রবক্তা ছিলেন। ডারউইনের তত্ত্ব প্রকাশের প্রায় এক হাজার বছর আগে ইরাকের একজন মুসলিম দার্শনিক প্রাকৃতিক নিয়মে প্রাণীকুলের মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে তার ওপর একটি বই লিখেছিলেন। এই দার্শনিকের নাম আল-জাহিজ। যে পদ্ধতিতে এই পরিবর্তন ঘটে তিনি তার নাম দিয়েছিলেন “প্রাকৃতিক নির্বাচন”।

Share this post:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *