গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –
আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে প্রায় ৩ ঘণ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বৈঠকে যুদ্ধবিরতি বা চূড়ান্ত কোনো চুক্তি হয়নি। বৈঠকের পর দুই নেতা যৌথ বিবৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে হাজির হন, তবে তারা কোনো প্রশ্ন নেননি। পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাদের বৈঠকে আলোচনায় অগ্রগতি হলেও এখনো লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি তারা। তবে তিনি এটিও বলেছেন, পরবর্তীতে এ নিয়ে অগ্রগতি অর্জনের জন্য খুব ভালো সুযোগ রয়েছে। খবর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির।
এদিন বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পুতিন ও ট্রাম্প যৌথ বিবৃতি পড়েই মঞ্চ ত্যাগ করেন। রুশ প্রতিনিধি দলও কোনো জবাব না দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যান। এতে স্পষ্ট হয় যে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দুই নেতার অবস্থান এখনো ভিন্ন।
ট্রাম্প বলেন, ‘‘পরবর্তী সময়ে অগ্রগতি অর্জনের জন্য আমাদের খুব ভালো সুযোগ রয়েছে।’’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও জানান, তিনি এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন। চুক্তি শেষ পর্যন্ত তাদের ওপর নির্ভর করবে ও তাদের সম্মতির প্রয়োজন পড়বে।
চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তি নেই উল্লেখ করে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘‘ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু আমরা শেষ পর্যায়ে পৌঁছাইনি।’’
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীকে প্রতিরোধের জন্য ইউক্রেনকে আধুনিক অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সাড়ে ৩ বছর ধরে চলা যুদ্ধ চালিয়ে আসা রাশিয়া ইউক্রেনের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনমন নিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘‘কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে কোনো বৈঠক হয়নি। দুই দেশের সম্পর্ক স্নায়ুযুদ্ধের পর সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছিল।’’
পুতিন জানান, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়েও তিনিও আন্তরিকভাবে আগ্রহী। এই যুদ্ধ বন্ধের জন্য এর মূল কারণগুলো নিরসন করতে হবে। তবে মূল কারণগুলো বলতে কী বুঝিয়েছেন, তার বিস্তারিত তিনি উল্লেখ করেননি।
আলাস্কায় এই বৈঠক অনেকের কাছে হতাশাজনক মনে হলেও কিয়েভে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। কারণ বৈঠকে এমন কোনো সমঝোতা হয়নি যাতে ইউক্রেনের ভূখণ্ড খোয়ানোর ঝুঁকি থাকত।
ইউক্রেনীয়রা জানেন, অতীতে রাশিয়ার সঙ্গে যত বড় চুক্তিই হোক না কেন, সেগুলো ভেঙে পড়েছে। তাই এখানেও যদি কোনো সমঝোতা হতো, তারা সন্দিহানই থাকতেন। তবে পুতিনের বক্তব্য ইউক্রেনীয়দের আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি আবারও বললেন, এই সংঘাতের মূল কারণ দূর না হলে স্থায়ী শান্তি আসবে না।
ক্রেমলিনের ভাষায় এ বক্তব্যের অর্থ দাঁড়াচ্ছে, রাশিয়া এখনো তার আগের লক্ষ্যেই অটল। আর তা হলো ইউক্রেনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ভেঙে দেওয়া। সাড়ে তিন বছর ধরে পশ্চিমাদের নানা উদ্যোগও পুতিনের মন পরিবর্তন করাতে পারেনি।