ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহুল প্রতীক্ষিত এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো—এর মধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও রয়েছেন—একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছেন, যা সাড়ে তিন বছরের সংঘাতের সমাধান আনতে পারে। এই চুক্তিতে ইউক্রেনকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, এই চুক্তিতে ভূমি বিনিময়ের বিষয়টি থাকতে পারে।
“উভয়ের উন্নতির জন্য কিছু ভূখণ্ড বিনিময় হবে,” বলেন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট।
পরে ক্রেমলিন এক অনলাইন বিবৃতিতে শীর্ষ সম্মেলনের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
দুই নেতা “ইউক্রেন সংকটের দীর্ঘমেয়াদি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে আলোচনা করবেন,” জানিয়েছেন পুতিনের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ।
“এটি নিঃসন্দেহে একটি চ্যালেঞ্জিং প্রক্রিয়া হবে, তবে আমরা সক্রিয় ও উদ্যমীভাবে এতে অংশ নেব,” বলেন উশাকভ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার ওপর যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করা গেলে যুদ্ধবিরতি সম্ভব। তিনি জানান, তিনি এক ডজনের বেশি দেশের নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তার দল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।
পুতিন ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল—লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন—এবং ২০১৪ সালে দখল করা কৃষ্ণসাগরের ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে নিজের দাবি করেছেন। তবে রাশিয়ার সেনারা এই চার অঞ্চলের সব ভূখণ্ড পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি।
এর আগে ব্লুমবার্গ নিউজ জানায়, মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তারা এমন একটি চুক্তির দিকে এগোচ্ছেন, যা রাশিয়ার দখলে থাকা ভূখণ্ডকে স্থায়ীভাবে মস্কোর নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা ব্লুমবার্গের খবরটিকে ‘জল্পনা’ বলে অভিহিত করেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি। রয়টার্সও ব্লুমবার্গের তথ্যের নির্দিষ্ট অংশ নিশ্চিত করতে পারেনি।
ইউক্রেন এর আগেও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, যুদ্ধের অবসানে তারা নমনীয় হতে পারে। তবে দেশের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড হারানো জেলেনস্কি ও তার সরকারের জন্য বেদনাদায়ক ও রাজনৈতিকভাবে কঠিন হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সাবেক উপ-প্রতিনিধি টাইসন বার্কার বলেন, ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে যে শান্তি প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছে, তা ইউক্রেন তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যান করবে।
“ইউক্রেনের উচিত তাদের আপত্তি ও আলোচনার শর্তগুলোতে অটল থাকা, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা,” বলেন অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের এই সিনিয়র ফেলো।
ব্লুমবার্গের তথ্যানুযায়ী, প্রস্তাবিত চুক্তির অধীনে রাশিয়া খেরসন ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে বর্তমান যুদ্ধরেখা বরাবর আক্রমণ বন্ধ করবে।
ট্রাম্প ও পুতিন
আলাস্কা সর্বশেষ বড় কূটনৈতিক বৈঠকের আয়োজন করেছিল ২০২১ সালের মার্চে, যখন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শীর্ষ কূটনীতিক অ্যান্টনি ব্লিংকেন চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ইয়াং জিয়েচির সঙ্গে আঙ্কোরেজে বৈঠক করেন। ওই বৈঠক দ্রুত প্রকাশ্য বিতণ্ডায় রূপ নেয়, যেখানে উভয়পক্ষ একে অপরের নীতির তীব্র সমালোচনা করে।
হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত এবং যুদ্ধের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করছেন। তবে তিনি প্রকাশ্যে পুতিনের প্রতি কখনো প্রশংসা, কখনো তীব্র সমালোচনা করেছেন।
পুতিনের সামরিক অভিযান বন্ধ না করায় ট্রাম্প হতাশা প্রকাশ করেন এবং হুমকি দেন, শুক্রবার থেকে রাশিয়া ও তার রপ্তানি ক্রেতাদের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপ করা হবে—যদি পুতিন যুদ্ধ বন্ধে রাজি না হন। ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই সংঘাতের অবসান না হলে এসব পদক্ষেপ কার্যকর হতে পারে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় স্পষ্ট হয়নি, এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে নাকি বিলম্বিত বা বাতিল হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন বুধবার ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে, কারণ তারা রাশিয়ার তেল আমদানি করে—যা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে রাশিয়ার গ্রাহকদের ওপর প্রথম আর্থিক শাস্তি।
ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বুধবার মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টার বৈঠক করেন, যা উভয়পক্ষই ‘গঠনমূলক’ বলে বর্ণনা করেছে।
ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠ মিত্র পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক শুক্রবার বলেন, সংঘাতের একটি বিরতির সম্ভাবনা ঘনিয়ে এসেছে। তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর বলেন,
“কিছু সংকেত রয়েছে, এবং আমাদেরও ধারণা, হয়তো সংঘাতের ‘ফ্রিজ’—আমি শেষ বলছি না, কিন্তু একটি বিরতি—এখন কাছাকাছি, দূরে নয়। এর সম্ভাবনা আছে।”
টাস্ক আরও জানান, জেলেনস্কি “খুব সতর্ক কিন্তু আশাবাদী” এবং ইউক্রেন চায় পোল্যান্ড ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি চুক্তির পরিকল্পনায় অংশ নিক।