জেলিফিশের আক্রমণে বন্ধ হয়ে গেল পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র

গণমঞ্চ ডেস্ক

জেলিফিশের একটি বিশাল ঝাঁকের আক্রমণে বন্ধ হয়ে গেল ফ্রান্সের অন্যতম বৃহত্তম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালক।

পানির ট্যাঙ্কে ঝাঁকে ঝাঁকে জেলিফিশ ঢুকে পড়ায় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লির কুলিং সিস্টেম ফিল্টার বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপাতত পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ফ্রান্সের উত্তরের উপকূলে অবস্থিত গ্রেভলাইন্স পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। ছয়টি চুল্লিবিশিষ্ট এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অন্তত ৫০ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হত।

পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় যে জায়গায়, তার থেকে কিছুটা দূরে তাকে পাম্পিং স্টেশন। এই স্টেশনের পানির সাহায্যে চুল্লি ঠান্ডা করা যায়। কিন্তু গত রোববার (১০ আগস্ট) গভীর রাতে আচমকাই বিপত্তি দেখা যায়। ঝাঁকে ঝাঁকে জেলিফিশ আটকে যায় ফিল্টারে।

‘জেলিফিশের বিশাল এবং অপ্রত্যাশিত উপস্থিতি’র ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি ইউনিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পুরো বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কারণ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অন্য দুটি ইউনিট আগে থেকেই অকার্যকর হয়ে পড়েছিল।

গ্রেভলাইন্স পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ফ্রান্সের অন্যতম বৃহত্তম। উত্তর সাগরের সঙ্গে একটি খালের মাধ্যমে সংযুক্ত সেটি। সাগরের পানি ব্যবহার করেই ঠান্ডা রাখা হয় চুল্লি। পরমাণু কেন্দ্রের ছয়টি ইউনিটের প্রত্যেকটি ৯০০ মেগাওয়াট করে মোট ৫.৪ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে সক্ষম। কিন্তু জেলিফিশের উৎপাতে এখন পুরো উৎপাদন বন্ধ।

ডানকার্ক ও ক্যালে শহরের মাঝামাঝি জায়গায় সমুদ্রসৈকতের ধারেই অবস্থিত গ্রেভলাইন্স পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। সেটি পরিচালনা করে জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ইডিএফ। সংস্থাটি জানিয়েছে, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যাতে নিরাপদে চুল্লিগুলো ফের চালু করা যায়।

তবে জেলিফিশের অতর্কিত আক্রমণে বিদ্যুৎকেন্দ্রে অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি বলে জানিয়েছে ইডিএফ। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা, কর্মীদের নিরাপত্তা বা পরিবেশের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়েনি।’

এই ঘটনার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে গত কয়েক বছরে ফ্রান্সের উপকূল অঞ্চলের পানি উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হয়ে উঠেছে। উষ্ণ পানিতে দ্রুত বংশবৃদ্ধি হয় জেলিফিশের।

এক্ষেত্রেও শীতল থেকে উষ্ণ পানিতে সরে আসছে জেলিফিশের ঝাঁক। সেখানে উত্তরোত্তর বংশবৃদ্ধি ঘটছে তাদের। পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠেছে যে, জাহাজের ট্যাঙ্কারেও প্রায়শ জেলিফিশ ঢুকে পড়ছে। এর ফলে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্যত্র পৌঁছে যাচ্ছে জেলিফিশ।

ফ্রান্সে যে জেলিফিশের বংশবৃদ্ধি ঘটছে, তাদের এশিয়ান মুন জেলিফিশ বলা হয়। এগুলো বিষাক্ত নয়। সাধারণত প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিমেই এদের দেখা যায়। উত্তর সাগরে এদের প্রথম দেখা যায় ২০২০ সালে। সেই থেকে যত সময় এগিয়েছে, ততই বেড়েছে এদের উৎপাত।

এর আগে চীন, জাপান এমনকি ভারতের বন্দর এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রেও জেলিফিশের উৎপাত দেখা গেছে। পরমাণু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন তুলনামূলক নিরাপদ বলেই ধরা হয়। কিন্তু তা থেকে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হচ্ছে, তার প্রভাব মারাত্মক হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *