মিয়া সুলেমান, (শিক্ষানবিশ প্রতিনিধি) ময়মনসিংহ থেকে।
জাতীয়করণ ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আগামী ১৩ আগস্ট (বুধবার) রাজধানীর রাজপথে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের MPO শিক্ষকদের এক বিশাল সমাবেশ। আয়োজকদের ভাষায়, এটি হবে একটি ঐতিহাসিক, সুসংগঠিত ও সুপরিকল্পিত গণসমাবেশ।
MPO শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ও তাদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। তাদের দাবি, সমতাভিত্তিক বেতন কাঠামো, পূর্ণাঙ্গ সরকারি সুবিধা, পেনশন ও অন্যান্য ভাতা নিশ্চিত করতে হবে, এবং সর্বোপরি, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করতে হবে এই দাবী জনিয়েছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে জোর প্রস্তুতি চলছে। আয়োজক সূত্রে আরও জানা গেছে, দেশের প্রতিটি জেলা থেকে অন্তত ৩/৪টি বাস এবং অনেক উপজেলা থেকে ৯-১০টি পর্যন্ত বাস ভাড়া করে শিক্ষকরা ঢাকায় আসবেন। আয়োজকরা আশা করছেন, সমাবেশে ২০ হাজারের বেশি শিক্ষক অংশ নেবেন।
শিক্ষকদের নিরাপদ যাতায়াত ও সমাবেশস্থলের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন। সমাবেশ সফল করতে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, লিফলেট, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে চলছে প্রচার-প্রচারণা।
উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালে শিক্ষকরা টানা ২০ দিন প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন। তৎকালীন সরকার ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা বাস্তবায়ন করলেও জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি এখনও অধরা রয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও, ২০২৫-২৬ অর্থবছর শুরু হয়ে যাওয়ার পরও বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, উৎসব ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতার কোনো সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। এতে চরম হতাশায় ভুগছেন MPO শিক্ষকরা।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “১৩ আগস্টের সমাবেশ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। শিক্ষকরা আজ আর কারও হাতের খেলনা হতে চান না। এবার আন্দোলন হবে শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষায় এবং সম্মানের ভিত্তিতে। আমরা সরকারকে সম্মান দেখিয়ে বারবার কথা বলেছি। কিন্তু দাবি না মানলে বাধ্য হয়েই ক্লাস বর্জনসহ কঠোর কর্মসূচিতে যেতে হবে।”
১৩ আগস্টের সমাবেশ কেবল একটি প্রতিবাদ নয়, এটি হচ্ছে দেশের লক্ষাধিক MPO শিক্ষকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান। শিক্ষক নেতারা বলছেন, শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়, তবে শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়ন ছাড়া উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়া সম্ভব নয়। এ জন্য সকল শিক্ষককে ঐক্যবদ্ধভাবে সমাবেশে অংশ নিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ১০ আগস্টের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেয়ার জন্য আবারও জোটের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া গণজাগরণ তৈরি হয়েছে। দাবি আদায় না করে শিক্ষক-কর্মচারীরা ঘরে ফিরবে না ইনশা-আল্লাহ।