জনপ্রশাসন এখনও ‘দুর্বল’ অবস্থায়: অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর

গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –

আগস্টের শুরুর দিকে এক অনুষ্ঠানে শ্রম ও নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন,  ‘আমি আগে জানতাম না যে ব্যুরোক্রেটিক প্যাচ কাকে বলে।’ মাত্র দু’দিন পরেই অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ খোলাখুলি স্বীকার করেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা ঠিকমতো রেকটিফাই করতে পারিনি। আর মানুষগুলোকে (কর্মকর্তারা) আমরা ঠিক করতে পারিনি। আমাদের সাথে তারা সমান তালে চলে না। অনেকে ইচ্ছে করে চলে না, অনেকে পারে না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের জ্যেষ্ঠ দুই উপদেষ্টার এ বক্তব্য বাংলাদেশের জনপ্রশাসনে গভীরতর সংকটের প্রতিচ্ছবি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একটি দক্ষ ও নিরপেক্ষ আমলাতন্ত্র গঠনের আশায় জনগণের প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নতুন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অদক্ষতা, সিদ্ধান্তহীনতা, ঘন ঘন রদবদল ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।

গতবছরে ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় প্রশাসনিক কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল। প্রশাসনের এই ভেঙে পড়া কাঠামো সামাল দিতে অন্তর্বর্তী সরকার কিছু অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চুক্তিতে এবং আগের সরকারের আমলে বঞ্চিত হয়েছেন—এমন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করে প্রশাসন সচল করার চেষ্টা করে। তবে এসব পদক্ষেপের সঙ্গেই আসে একের পর এক এক বাধ্যতামূলক অবসর, রদবদল; যেকারণে অস্থিতিশীলতা অস্থিতিশীলতা, আস্থার সংকট ও দ্বিধাদ্বন্দ্বে এখনো নড়বড়ে অবস্থানে রয়েছে দেশের জনপ্রশাসন।

ফলাফল—একটি ভঙ্গুর ও বিভক্ত সরকারি প্রশাসন। বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওএসডি) করা হয়েছে প্রায় ১০০ কর্মকর্তাকে, যা কর্মকর্তাদের ‘সাইডলাইনে পাঠানোর’ কৌশল হিসেবে দেখা হয়। পাশাপাশি সচিব পর্যায় ও তার ঊর্ধ্বে থাকা ২৯ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। ফলে সরকারি সংস্থাগুলোর ৩৮টি শীর্ষ পদে স্থায়ী নিয়োগ নেই; দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

সাবেক একজন সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রশাসন থেকে গতিশীলতা হারিয়ে গেছে। “জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে তেমন চেষ্টা হয়নি; বরং ফ্যাসিবাদের দোসরদের খুঁজে বের করতেই বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।”

এদিকে টিআইবি এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, গত এক বছর ধরে জনপ্রশাসনে প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বপালনে ঘাটতি দেখা গেছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দোদুল্যমানতা বা পশ্চাদসরণ দেখা গেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও অব্যাহতিতে স্বচ্ছতার ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে।

এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে প্রায় ১,০০০ কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন। ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন ৭৬৪ জন—অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট পদ ছাড়াই উচ্চপদে উন্নীত হয়েছেন। এতে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব না থাকা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তায় মাথাভারী একটা প্রশাসন হয়ে উঠেছে।

এমতাবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার বক্তব্য, নিয়োগ-পদোন্নতি-বাধ্যতামূলক অবসর সংক্রান্ত তথ্য এবং টিআইবি-র গবেষণা মিলিয়ে জনপ্রশাসনের স্থবিরতা ও বিশৃঙ্খলার একটি স্পষ্ট চিত্র উঠে আসে।

গত বছরের ৫ আগস্ট, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিন দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম কার্যত অচল ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরও অনেক কর্মকর্তা অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন, কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। আর অনেকে কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিলেন।

শুরুতে এই প্রথা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও, প্রশাসন সচল করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আবারও অনেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হয়েছে, তাও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া যার সমালোচনা করে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের পথেই হাঁটছে।”

তার মতে, অনেক নিয়োগপ্রাপ্তের দক্ষতা প্রয়োজনীয় মানের নয়। বাধ্যতামূলক অবসর, অসংখ্য কর্মকর্তার ওএসডি হওয়া, ঘন ঘন বদলি, সিদ্ধান্তহীনতা, অবিশ্বাস ও অভ্যন্তরীণ বিভ্রান্তি—সব মিলিয়ে সরকারি প্রশাসন এখনও অস্থির ও ভঙ্গুর।

সাবেক এক সচিব টিবিএসকে বলেন, জনপ্রশাসন পুনর্গঠনে সরকারের সদিচ্ছার অভাব ছিল বলে মনে হয়েছে। “কোনো টার্গেট নিয়ে এগোয়নি। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, কিন্তু কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে জোর কম।”

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জেলা প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে বিশৃংখলা দেখা দেয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সরকার দুই দফায় ৫৯ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই নিয়োগের পর সচিবালয়ে বিক্ষোভ ও হট্টগোল করেন নিজেদের বঞ্চিত দাবি করা কর্মকর্তারা। জনপ্রশাসন সচিবকে ঘেরাও করেন তারা। পরে ৮ জেলার ডিসি নিয়োগ বাতিল করা হয়।

জনপ্রশাসনে সবচেয়ে আলোচনা সৃষ্টি করে ওই ডিসি নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ। কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য তিনজন উপদেষ্টার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি অবশ্য ঘুষ নিয়ে ডিসি নিয়োগের অভিযোগের সত্যতা পায়নি।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন ও তাদের সুপারিশ নিয়েও কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করেন। উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ, এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব করে কমিশন। প্রশাসন ক্যাডাররা প্রকাশ্যে এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেন। সর্বশেষ গত ২৫ মে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, জারির পরে সচিবালয়ের কর্মচারীরা এটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, স্মারকলিপি দেওয়ার মতো কর্মসূচি পালন করেছেন।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে, সেরকম ২৯ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে প্রায় ১০০ জনকে। যাদের মধ্যে ১০ জনের বেশি সচিব আছেন। অনেকের নামে মামলা হয়েছে। অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন।

গত এক বছরে উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে ৭৮৫ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন। ৪ আগষ্ট পর্যন্ত ৪৫ জন সচিব ও সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। যেসব কর্মকর্তা প্রমাণ করতে পেরেছেন যে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে তারা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন—- তাদের পদোন্নতি, পদায়ন, পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে।

গত বছরের ৪ অক্টোবর গণমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন বেশকিছু সুপারিশ করেছে।

এরমধ্যে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস) গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। বিভিন্ন সার্ভিস থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে এই সার্ভিসে যোগ দেওয়া যাবে। এসইএসের অধীনে থাকবে উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত সব পদ। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদের নাম পরিবর্তনসহ সংস্কার কমিশনের ১০টি সুপারিশ বাস্তবায়নে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠন করে তিনটি কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এপর্যন্ত এর মধ্যে শুধু পাবলিক সার্ভিস কমিশন (শিক্ষা) গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন (সাধারণ) এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠনের বিষয়ে কিছু বলেনি।

এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস সংস্কারের অংশ হিসেবে এই অফিসের কার্যক্রম আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে উভয় মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় বসবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ভেরিফিকেশন ছাড়া নাগরিকদের পাসপোর্ট পাওয়ার বিষয়টি-ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

গত ৭ আগষ্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের করা সুপারিশগুলোর ১২১টি সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য ঠিক করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৬টি সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়েছে। ৮৫টি সুপারিশ বাস্তবায়নাধীন। ১০টি সুপারিশ আংশিক বাস্তবায়ন হচ্ছে। আর ১০টি বাস্তবায়নযোগ্য কি না, সেটা এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে।’

বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর মিলিয়ে সরকারের অন্তত ২৮টি সংস্থার প্রধানের পদ ফাঁকা রয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাইরে আরও অন্তত ১০টি দপ্তরপ্রধানের পদ ফাঁকা রয়েছে। এসব পদে নিয়োগ দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে সরকারের অন্তত ৩৮টি দপ্তরের শীর্ষপদ ফাঁকা।

কোনো কোনো দপ্তর প্রধানের পদ আট মাস, কোথাও পাঁচ মাস, কোথাও তিন মাস ধরে খালি। সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও শীর্ষপদে কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। সচিব, চেয়ারম্যান ও মহাপরিচালক পদে রুটিন দায়িত্ব বা ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালানো হচ্ছে। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ ও নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকারি দপ্তরের শীর্ষপদে নিয়োগে বিভিন্ন মহলের তদবির, আপত্তি, নিয়োগ-সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি কারণে এসব পদ ফাঁকা থাকছে।

অন্যদিকে গত ৮ জানুয়ারি, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে জনপ্রশাসন-বিষয়ক একটি কমিটি করা হয়েছে। জনপ্রশাসনে যুগ্ম সচিব থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বদলি, শৃঙ্খলা ও নিয়োগের ক্ষেত্রে এ কমিটির পরামর্শ নিতে হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কমিটির সুপারিশ নিতে গিয়ে অনেক সময় চলে যাচ্ছে।

২০২৪ সালের ৮ আগষ্ট থেকে এবছরের ৪ আগষ্ট পর্যন্ত তিনটি অধ্যাদেশ প্রণয়ন, তিনটি বিধিমালা সংশোধন, একটি বিশেষ বিধিমালা প্রণয়ন এবং ২২টি নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন ও সংশোধনের সুপারিশ করেছে জনপ্রশঅসন মন্ত্রণালয়। ২৪টি বিভাগীয় মামলা হয়েছে এ সময়ে।

টিআইবি তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, জনপ্রশাসনে প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বপালনে ঘাটতি দেখা গেছে। 

সংস্থাটি আরও বলেছে, প্রশাসনে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। এছাড়া দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে বঞ্চিত হওয়ার নামে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা আদায়, ডিসি পদায়নে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠাকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলে মনে করছে টিআইবি। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অস্থিরতা, নতুন রাজনৈতিক বলয় সৃষ্টির প্রয়াস ও ব্যাপক রদবদলের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতা লক্ষ্য করা গেছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতা দৃশ্যমান ছিল।

জনপ্রশাসন ঠিকভাবে কাজ না করায় গত এক বছরে সরকারের নীতি ও পরিকল্পনাগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন হয়নি। এতে রাষ্ট্রীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন নাগরিকরা। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও গতি হারিয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬৭.৮৫ শতাংশে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে উন্নয়ন কার্যক্রম বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে বাস্তবায়নের হার নেমে এসেছে মাত্র ২১.৭৪ শতাংশে।

আমন ও বোরো—উভয় মৌসুমের জন্য সরকারের খাদ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি, ফলে সরবরাহ বজায় রাখতে চাল আমদানি করতে হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থাৎ সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অপসারণ করে সেখানে প্রশাসক হিসেবে আমলাদের নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় নাগরিক সেবা ব্যাপকভাবে হয়েছে।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও এরমধ্যে বেশকিছু সরকারের বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও— গত এক বছরে জনপ্রশাসনে বিশৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণহীনতা বিশেষজ্ঞদের হতাশ করেছে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, “উন্নতির বদলে পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে; পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে রাজনৈতিক সরকার আসার পরেও সবকিছু ঠিক করতে কয়েক বছর লাগবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *