‘চালক সিন্ডিকেট’ এর কারণে হাসপাতালের পথেই মৃত্যু নবজাতকের

গণমঞ্চ ডেস্ক-

শরীয়তপুর থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এক মুমূর্ষু নবজাতককে বহনকারী ঢাকাগামী অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এতে অক্সিজেন স্বল্পতায় হাসপাতালের পথেই মৃত্যু হয় নবজাতকটির। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীর স্বজনরা।

নবজাতকের স্বজন ও পুলিশের সূত্র থেকে জানা যায়, সম্প্রতি শরীয়তপুর শহরের বেসরকারি হাসপাতাল নিউ মেট্রো ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর এলাকার নূর হোসেন সরদারের স্ত্রী রুমা বেগম। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই শিশুটি ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এতে পরিবারের লোকজন রাত আটটার দিকে ঢাকাগামী একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন।

অ্যাম্বুলেন্সে মুমুর্ষ নবজাতককে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলে পথে গতিরোধ করে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালক সবুজ দেওয়ান ও আবু তাহের দেওয়ান। ওই দুই চালক জানান, তাদের অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত অন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঢাকায় যাওয়া যাবে না। একপর্যায়ে তারা ঢাকাগামী সেই অ্যাম্বুলেন্স চালকের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাবি কেড়ে নেয় এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে থাকে। এ সময় রোগীর লোক বাধা দিলে তাদেরকেও লাঞ্ছিত করা হয়। সেই অবস্থায় প্রায় ৪০ মিনিট সময় অতিবাহিত হলে অ্যাম্বুলেন্স আটকে থাকার কারণে শিশুটি সেখানেই মারা যায়।

এদিকে শিশুটি মারা যাওয়ার কারণে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দৌরাত্মকে দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। তারা এ ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।

রানু আক্তার নামে রোগীর এক স্বজন বলেন, ‘আমরা তাদের অনেক অনুরোধ করেছিলাম গাড়িটিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনেনি। চালকের কলার ধরে গাড়ির চাবি নিয়ে গেছে, পরে আমাদের বাচ্চাটি মারা যায়। ওদের সিন্ডিকেটের জন্যই আমাদের সাথে এমন ঘটনা ঘটেছে। আমরা ওদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই’

মারা যাওয়া শিশুটির নানী শেফালী বেগম বলেন, ‘আমার নাতীরে ঢাকায় নিতে পারলে হয়তো বেঁচে যেত। ওরা আমার নাতীরে বাঁচতে দেয়নি। ওদের জোরাজুরিতে আমার নাতির মুখ থেকে অক্সিজেন খুলে গেছে। ওদের আমি বিচার চাই।’

ঢাকার অ্যাম্বুলেন্স চালক মোশারফ মিয়া বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে ট্রিপ নিয়ে শরীয়তপুরে এসেছিলাম। পরে ফিরতি ট্রিপের জন্য হাসপাতালের পাশেই গাড়ি সাইড করে রাখি। রোগীর লোক ঢাকায় যাওয়ার জন্য আমাকে পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া করে। শিশুটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমি দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দেই। তখন কয়েকজন লোক এসে আমাকে জোর করে কলার ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে চাবি কেড়ে নেয়। আমি তাদের অনুরোধ করলেও ছাড়েনি। একপর্যায়ে ওই লোকদের বলেছিলাম আপনারাই তাহলে এই পেশেন্ট নিয়ে যান, কিন্তু পেশেন্টের লোক আমাকেই গাড়ি নিয়ে যেতে বলছিল। পরে তারা আমাকে না ছাড়ায় বাচ্চাটা গাড়িতেই মারা যায়।’

এদিকে ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন ওই দুই স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালক।

এ ব্যাপারে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখনো ভুক্তভোগী পরিবারের কোনো হদিস নাই। তারা কোনো অভিযোগ না দিলে আমরাই ব্যবস্থা নেব। অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *