ঘুমের মধ্যে অনেকের কথা বলার অভিজ্ঞতা আছে। অনেকের ধারণা, ঘুমের মধ্যে বলা কথাগুলো আমাদের মনের গভীরের অবচেতন ইচ্ছা। এই কথাগুলো আমরা সাধারণত প্রকাশ করতে পারি না। ঘুমের মধ্যে বেশি কথা বলে শিশুরা। তবে যেকোনো বয়সের মানুষই ঘুমের মধ্যে কথা বলতে পারেন। বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ জীবনে অন্তত একবার ঘুমের মধ্যে কথা বলেন।
ঘুমের মধ্যে কথা বলা কোনো রোগ বা ব্যাধি নয়। এটি মানুষের ঘুমের স্বাভাবিক আচরণ। ঘুমের মধ্যে কথা বলাকে ইংরেজিতে বলে সোমনিলোকুই। ঘুমের মধ্যে বলা কথাগুলো সম্পূর্ণ বাক্য হতে পারে, আবার বিড়বিড় করা, চিৎকার করা বা হাসির মতোও হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫০ শতাংশ শিশু ঘুমের মধ্যে কথা বলে।
আমেরিকান একাডেমি অব স্লিপ মেডিসিনের বোর্ড সদস্য জেনিফার মার্টিন বলেন, ‘যদিও বেশিরভাগ শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি থেকে বেরিয়ে আসে, তবে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় এটি আবার ফিরে আসতে পারে।’
ঘুমের মধ্যে বলা কথাগুলোর প্রায় অর্ধেকই বোঝা যায় না। ২০১৭ সালে স্লিপ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণার অডিও রেকর্ডিং শুনে বোঝা গেছে, মোট ৮৮৩টি কথোপকথনের মধ্যে ৩ হাজার ৩৪৯টি শব্দ বোঝা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দটি ছিল ‘না’। অনেকের ধারণা, ঘুমের মধ্যে মানুষ সত্য কথা বলে বা মনের গোপন কথা প্রকাশ করে ফেলে। তবে জেনিফার মার্টিনের মতে, ‘এটি মূলত একটি মিথ। ঘুমের মধ্যে কথা বলার বেশিরভাগ ঘটনা নন-র্যাপিড আই মুভমেন্টের সময় ঘটলেও এটি ঘুমের যেকোনো পর্যায়ে ঘটতে পারে।’
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট অবস্থা ও পরিস্থিতির কারণে ঘুমের মধ্যে কথা বলার প্রবণতা বেড়ে যায়। এর পেছনে জিনগত কারণ থাকতে পারে।
২০১৮ সালে প্রকাশিত স্লিপ মেডিসিন রিভিউজ জার্নালের এক গবেষণায় বলা হয়, ঘুমের মধ্যে বলা কথা আসলে সেই স্মৃতিগুলোরই পুনরাবৃত্তি হতে পারে, যা মস্তিষ্ক সেই মুহূর্তে প্রক্রিয়াকরণ করতে থাকে। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যে কথা বলার কারণ ভিন্ন হতে পারে। শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়, কারণ তাদের মস্তিষ্ক তখনো বিকশিত হতে থাকে এবং ঘুমের বিভিন্ন পর্যায় নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট অবস্থা ও পরিস্থিতির কারণে ঘুমের মধ্যে কথা বলার প্রবণতা বেড়ে যায়। এর পেছনে জিনগত কারণ থাকতে পারে। কারণ বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে এটি অনেক সময় একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দেখা যায়। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুসারে, এটি অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো অন্য ঘুমের ব্যাধির সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারে।
তবে ঘুমের মধ্যে কথা বলা সাধারণত ক্ষতিকর কিছু নয়। অবশ্য পাশে ঘুমানো কারো জন্য অপ্রীতিকর হতেই পারে। এ ব্যাপারে জেনিফার মার্টিন পরামর্শ দিয়েছেন, ‘যদি কেউ ঘুমের মধ্যে কথা বলে, তবে তাকে আলতো করে ধাক্কা দিলে বা স্পর্শ করলে কথা বলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
সূত্র: লাইভ সায়েন্স, পপুলার সায়েন্স, আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব স্লিপ মেডিসিন ও স্লিপ মেডিসিন রিভিউস।