গ্রামের শিশুদের স্কুলের জন্য নিজের বাড়ি ছেড়ে দিলেন ভারতের কৃষক

ভারতের রাজস্থানের পাহাড়ি গ্রাম পিপলোদির একজন কৃষক হঠাৎ করে অপ্রত্যাশিতভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন। খবর বিবিসির।

৬০ বছর বয়সী মোর সিং কখনো স্কুলে যাননি। কিন্তু ভারি বর্ষণে গ্রামের স্কুল ভবনটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর নিজের বাড়িটি স্কুলের জন্য দিয়ে দেন। তার এ নিঃস্বার্থ ত্যাগ তাকে স্থানীয়দের কাছে নায়ক হয়ে উঠেছেন।

তিনি জানান, তার সাধারণ দুই কক্ষের বসতি এখন একটি উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে গ্রামের ৫০–৬০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।

গত সপ্তাহে, রাজ্য সরকার এই উদারতার স্বীকৃতিস্বরূপ মোর সিংকে দুই লাখ রুপি (দুই হাজার ২৬৬ ডলার) আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

রাজস্থানে প্রায় ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভারী জুলাই মাস দেখা গেছে বলে জানিয়েছে রাজ্যের আবহাওয়া কেন্দ্র। রাজ্যব্যাপী ওই সময়ে ২৮৫ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

২৫ জুলাই পিপলোদিতে একটি ক্লাসরুমের ছাদ ধসে পড়ে, এতে সাতজন শিশু নিহত, ২১ জন আহত হন এবং গ্রামের স্কুলটি ধসে যায়।

ঘটনার দুই দিন পর, মোর সিং এবং তার পরিবার, যার মধ্যে দুই বছর বয়সী নাতিও রয়েছেন, একটি বাঁশ এবং টারপোলিন দিয়ে তৈরি অস্থায়ী কুঁড়েঘরে চলে যান।

মোর সিং জানিয়েছেন, এটি “একটি আদর্শ বাসস্থান” নয়, তবে তিনি শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য নিজের স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করতে প্রস্তুত। 

তিনি ফোনে বিবিসিকে বলেন,  “যদি আমি সেই দ্রুত সিদ্ধান্তটি না নিয়ে থাকতাম, অনেক শিশু স্কুল থেকে বাদ পড়ত। একমাত্র অন্য স্কুলটি পাশের গ্রামে, যা পাহাড়ের মধ্য দিয়ে দুই কিলোমিটার (১.২৪ মাইল) পথ হেঁটে যেতে হয়। বড়রা যেভাবে মানিয়ে নিতে পারত, ছোটরা পারত না।”

তিনি ৩ বছর সময় নিয়ে তার বাড়িটি তৈরি করেছিলেন এবং ১৩ বছর আগে পরিবারের সঙ্গে সেখানে উঠেছিলেন।

২৫ জুলাই পিপলোদিতে ঘটে যাওয়া ট্রাজেডি রাজস্থানে স্কুল অবকাঠামোর দুর্বলতার পদ্ধতিগত সমস্যাকে উন্মোচিত করেছে। সম্প্রতি একটি সরকারি জরিপে দেখা গেছে, রাজ্যে পাঁচ হাজার ৬০০টির বেশি স্কুল ক্ষয়প্রাপ্ত অবস্থায় রয়েছে।

মোর সিং তার বাড়ি স্কুলে পরিণত করার পর, রাজ্য সরকার ফেডারেল স্কিমের অধীনে পিপলোদিকে “মডেল ভিলেজ” ঘোষণা করেছে।

স্থানীয় কর্মকর্তা অজয় সিং রাঠোর বিবিসিকে জানান, এটি নতুন স্কুল, খেলার মাঠ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং অন্যান্য সুবিধার জন্য আরও তহবিল গঠনে সহায়তা করবেন।

তিনি আরও যোগ করেন, “গ্রামে নতুন স্কুল নির্মাণে অন্তত আরও দেড় বছর সময় লাগবে।”

পিপলোদিতে প্রায় ৯০টি পরিবার বসবাস করে, যাদের অধিকাংশই উপজাতি সম্প্রদায়ের।

মোর সিংয়ের ছোট দুই কক্ষের বাসভবনটিতে এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। ছবি: বিবিসি

মোর সিং বলেন, “আমরা একটি দরিদ্র সম্প্রদায় এবং খুব কম উন্নয়ন দেখেছি।এই কারণেই এই শিশুদের স্কুলে যাওয়া, শিক্ষা গ্রহণ করা এবং তাদের লক্ষ্য অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

মোর সিংয়ের মহৎ কাজ তাকে গ্রামের একজন সেলিব্রিটি বানিয়ে দিয়েছে।

রাম দয়ালের মেয়ে ২৫ জুলাই ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল এবং বর্তমানে মোর সিংয়ের বাড়িতে স্কুলে পড়ছে মেয়েটি। তিনি মোর সিংয়ের সম্পর্কে বলেন, “তিনি পুরো গ্রামের জন্য একজন নায়ক।”

অন্য একজন বাসিন্দা, রাম কুমার বলেন, “যদি তিনি তার বাড়ি স্কুলের জন্য দান না করতেন, অনেক শিশু স্কুল ছেড়ে দিত। আমরা সবাই তার এই উদারতার সত্যিই প্রশংসা করি।”

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *