গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার মাত্র ২৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান আসামি ও তার স্ত্রীসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুক্রবার রাতে রাজধানীর তুরাগ, গাজীপুর মহানগর ও ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—মিজান ওরফে কেটু মিজান (প্রধান আসামি, জামালপুরের মেলানদহ উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের মোবারকের ছেলে), তার স্ত্রী গোলাপি, স্বাধীন, আল আমিন, ফয়সাল হাসান (২৩), পাবনার চাটমোহর উপজেলার পঞ্চবারিয়া গ্রামের কিয়ামুদ্দিন হাসানের ছেলে, শাহ জালাল (৩২), কুমিল্লার হোমনা উপজেলার কাশিপুর (আনোয়ারপুর) গ্রামের হানিফ ভূঁইয়ার ছেলে।
এর মধ্যে প্রধান আসামি মিজান ওরফে কেটু মিজান গাজীপুরের বাসন থানার চাঁদনা চৌরাস্তা এলাকায় মনজু মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
পুলিশ জানায়, তারা সক্রিয় ছিনতাই চক্রের সদস্য এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। ঘটনার শুরুতে যে নারীকে দেখা গেছে, তিনি গোলাপি—প্রধান আসামির স্ত্রী। আর দাড়িওয়ালা, ক্যাপ পরা, দা হাতে দৌড়ানো ব্যক্তি হলেন মিজান ওরফে কেটু মিজান। সাদা শার্ট ও জিন্স পরিহিত, দা হাতে দাঁড়ানো ব্যক্তি স্বাধীন, আরেকজন আসামি আল আমিন।
অতিরিক্ত কমিশনার তাহেরুল হক চৌহান বলেন, তুহিন হত্যার পরপরই কাছের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। ওই ফুটেজ দেখে হামলায় জড়িতদের শনাক্ত করে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে জিএমপির গোয়েন্দা শাখা (দক্ষিণ) গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর থেকে প্রধান আসামি মিজান ও তার স্ত্রী গোলাপিকে গ্রেপ্তার করে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর তুরাগ থেকে বাসন থানা পুলিশ আল আমিনকে এবং গাজীপুর শহর থেকে র্যাব স্বাধীনকে আটক করে।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান জানান, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় তুহিনের বড় ভাই সেলিম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। গ্রেপ্তার সবাই স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন অপরাধ, বিশেষ করে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটে গাজীপুর শহরের চাঁদনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সাংবাদিক তুহিনকে।
আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন এবং পরিবার নিয়ে গাজীপুর শহরের পালপাড়া এলাকায় থাকতেন।
তিনি দুই সন্তান—তৌফিক হাসান তাকী (৫) ও আব্দুল্লাহ আল ফাহিম (৩)—রেখে গেছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি গাজীপুরে একটি ইউনানি ওষুধ কোম্পানির ডিলার ছিলেন।
তুহিন হত্যাকাণ্ডে সাংবাদিক মহলসহ পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে শোক ও ক্ষোভ নেমে এসেছে। দ্রুত বিচার ও হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিভিন্ন মহল থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।