গাজীপুর মহানগরের ব্যস্ততম এলাকায় প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) নৃশংসভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তার মসজিদ মার্কেটের সামনে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহত তুহিন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাসান জামালের ছেলে। পেশাগত কারণে তিনি পরিবারসহ গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বসবাস করতেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে মসজিদ মার্কেটের সামনে সাংবাদিক তুহিনকে হঠাৎ পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসে ধাওয়া করে। তুহিন দৌড়ে পাশের ঈদগাঁ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। সেখানে দুর্বৃত্তরা দোকানের ভেতরে ঢুকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে এবং একপর্যায়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক শামীম হাসান বলেন, ‘রাত ৮টার পর আমরা দুজন হেঁটে ঘটনাস্থলে যাই। হঠাৎ পাশের মসজিদ মার্কেটের গেট থেকে একজন ব্যক্তি বের হয়ে চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘এই পাইছি, পাইছি’। এরপর তিনি দৌড়ে ছুটে যান এবং সঙ্গে সঙ্গে একটি চাপাতি বের করেন। যাকে লক্ষ্য করে ছুটছিলেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে দৌড় দেন এবং আমাদের পাশ দিয়ে পালিয়ে যান। এই দৃশ্য দেখে সাংবাদিক তুহিন মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে করতে তাদের পেছনে দৌড় দেন। আমি তখন ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই।’
তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর টার্গেট লোকটিকে না পেয়ে হামলাকারীরা ঘুরে দেখেন, তুহিন তাদের ভিডিও করছেন। তখনই তারা তুহিনকে ধাওয়া করে। তুহিন পাশের একটি চায়ের দোকানে ঢুকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু হামলাকারীরা সেখানেও ঢুকে তাকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পরে এসে হতভম্ব হয়ে যাই। কী থেকে কী হয়ে গেল! সঙ্গে সঙ্গে থানার ওসিকে ফোন দিয়ে পুলিশ পাঠানোর অনুরোধ করি।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘তুহিন হঠাৎ দৌড়ে এসে আমার দোকানে ঢুকে পড়ে। এরপর তিনজন ভেতরে ঢুকে তাকে কোপাতে থাকে। বাইরে আরও দুজন রামদা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকেও হুমকি দেয়।’
যদিও হত্যাকাণ্ডের কারণ ঘিরে প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, সাংবাদিক তুহিন ফুটপাত ও দোকানপাট থেকে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত ফেসবুক লাইভ করায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁর প্রোফাইল ও কর্মরত সংবাদমাধ্যমে এমন কোনো লাইভের অস্তিত্ব মেলেনি।
এদিকে জয়দেবপুর থানা পুলিশ ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ঘটনার কিছু সময় আগে রাস্তায় এক নারী এক ব্যক্তির (পরবর্তীতে পরিচিত হন বাদশা মিয়া নামে) সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ওই নারীকে আঘাত করেন। এ দৃশ্য দেখে ওই নারীর পূর্বপরিচিত চার-পাঁচজন সশস্ত্র ব্যক্তি ঘটনাস্থলে এসে ওই ব্যক্তিকে উপর্যুপরি কুপিয়ে আহত করে। এই হামলার ঘটনাটি সাংবাদিক তুহিন মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। দুর্বৃত্তরা তুহিনকে ভিডিও ডিলিট করতে বলে। তিনি অস্বীকৃতি জানালে বা দেরি করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তুহিনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।
হত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা খবর পাই যে, চান্দনা চৌরাস্তার সামনে সাংবাদিক তুহিনকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় পাই। তদন্তের স্বার্থে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। ফুটেজে দেখা যায়, নারীসংক্রান্ত একটি ঘটনায় প্রথমে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক তুহিনের সঙ্গে দুর্বৃত্তদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করা হয়।’