গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –
গাজা সিটিতে বিমান হামলায় হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু ওবাইদা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ও দেশটির নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতকে এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে এই ‘নিখুঁত অভিযানের’ জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।
হামাস তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি এর আগে জানিয়েছিল, জেলার একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলের বিমান হামলায় কয়েক ডজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, গাজা সিটির ঘনবসতিপূর্ণ আল-রিমাল এলাকায় এই হামলায় অন্তত সাতজন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছেন, এবং হতাহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
গাজা সিটিতে ইসরায়েলের পরিকল্পিত অভিযানের আগে চলমান বিমান হামলার মধ্যেই শনিবার এই হামলা চালানো হয়।
কাটজ রোববার হুঁশিয়ারি দেন, ‘গাজায় অভিযান জোরদার করার’ সাথে সাথে ওবাইদার আরও অনেক ‘সহযোগীকে’ লক্ষ্যবস্তু করা হবে।
হামাসের মুখপাত্রকে লক্ষ্য করে চালানো এই হামলা সম্পর্কে আইডিএফ ও শিন বেত সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলে, সংগৃহীত পূর্ব তথ্যের ভিত্তিতে ওবাইদার গোপন আশ্রয় শনাক্ত ক্ররে এই অভিযান চালানো হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার আগে হামাসের সামরিক শাখার যে অল্প কয়েকজন সিনিয়র সদস্য বেঁচে ছিলেন, ওবাইদা ছিলেন তাদের একজন।
আল-রিমাল এলাকার ছয়তলা অ্যাপার্টমেন্ট ভবননের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় দুটি ভিন্ন দিক থেকে একযোগে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।যে ফ্ল্যাটকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, সেটি দাঁতের ক্লিনিক হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
গত কয়েক বছরে প্রায় ৪০ বছর বয়সি ওবাইদা হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দীর্ঘ ও তীব্র সমালোচনামূলক বক্তৃতা দিয়েছেন।
সর্বক্ষণ ফিলিস্তিনি স্কার্ফে মুখ ঢাকা থাকায় তিনি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে হামাস সমর্থকদের কাছে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।
শুক্রবার তার সম্ভাব্য শেষ বক্তৃতায় ওবাইদা বলেছিলেন, অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের ভাগ্য হামাস যোদ্ধাদের মতোই হবে। গাজা সিটিতে পরিকল্পিত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সতর্কও করেছিলেন তিনি।
আল-রিমাল এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি থেকে মাত্র ১০০ মিটার (৩২৮ ফুট) দূরে একটি সেলুন চালান মোহাম্মদ ইমাদ। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘বিস্ফোরণগুলো ছিল ভয়ংকর—আমি এক ঘণ্টার বেশি সময় নড়াচড়া করতে পারিনি।’
বিবিসির যাচাই করা ফুটেজে দেখা যায়, হামলার পর আতঙ্কিত বাসিন্দারা রাস্তায় পালিয়ে আসছেন। কাপড়ে ঢাকা একটি শরীর থেকে রক্ত গড়াতে দেখা যায়। একজন ব্যক্তি আহত একটি শিশুকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
যদিও আইডিএফ দাবি করেছে, হামলার আগে ‘বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির সম্ভাবনা কমাতে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহার, আকাশ থেকে পর্যবেক্ষণ এবং অতিরিক্ত গোয়েন্দা তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল’।
বিবিসি নিউজ আইডিএফ বা হামাস কোনো পক্ষের দাবিই পৃথকভাবে যাচাই করতে পারেনি।
আগস্টের শুরুতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ২২ মাসব্যাপী যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে নতুন অভিযানের মাধ্যমে গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন করে।
জাতিসংঘ বারবার সতর্ক করেছে, সম্পূর্ণ সামরিক দখল নিলে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক ও গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের ‘বিপর্যয়কর পরিণতি’ হতে পারে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ সম্প্রসারণের পরিকল্পনার আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে উপেক্ষা করেছেন।
গাজা সিটি দখলের অভিযান এখনও পুরোদমে শুরু না হলেও, প্রায় দশ ১০ লাখ বাসিন্দার শহরটিতে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, শনিবারে যে অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে হামলা হয়েছে, সেখানে কয়েক মাস আগেও ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়েছিল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের সৈন্যরা প্রবেশের আগে গাজা সিটির সব মানুষকে সরিয়ে দক্ষিণে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই সংঘাতের সময় গাজার বেশিরভাগ মানুষ এরইমধ্যে বহুবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
শহরের ৯০ শতাংশের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।