গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল, জানালেন বিশ্বের শীর্ষ গণহত্যা গবেষকরা

গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –

বিশ্বের শীর্ষ গণহত্যা গবেষকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলার্স (আইএজিএস) ঘোষণা করেছে, গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে। জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশনের সংজ্ঞা অনুসারে ইসরায়েলের চলমান কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তারা একটি প্রস্তাব পাস করেছে। খবর বিবিসি’র।

তিন পৃষ্ঠার ওই প্রস্তাবে আইএজিএস গত ২২ মাসের যুদ্ধে ইসরায়েলের একের পর এক পদক্ষেপের তালিকা দিয়েছে, যেগুলো তারা গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আইএজিএস বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণহত্যা গবেষকদের পেশাগত সংগঠন, যেখানে বহু ‘হলোকাস্ট’ বিশেষজ্ঞও যুক্ত আছেন। সমিতির ৫০০ সদস্যের মধ্যে ২৮ শতাংশ ভোটে অংশ নেন এবং তাদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েল স্বাস্থ্যসেবা, ত্রাণ ও শিক্ষা খাতসহ টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা ও স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী ইসরায়েলি হামলায় ৫০ হাজার শিশু নিহত বা আহত হয়েছে। এতে গাজায় ফিলিস্তিনিদের একটি জনগোষ্ঠী হিসেবে বেঁচে থাকা ও পুনর্জন্মের সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি নেতারা গাজার সব ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক উৎখাতের পক্ষে এবং প্রায় পুরো গাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে।

প্রস্তাবে ইসরায়েলি নেতাদের বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়, তারা ফিলিস্তিনিদের অমানবিকভাবে উপস্থাপন করছেন, সবাইকে শত্রু হিসেবে দেখাচ্ছেন এবং গাজাকে ‘চাপা’ দেওয়া ও ‘নরকে’ পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, প্রস্তাবটি ‘হামাসের মিথ্যা’ ও দুর্বল গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। তারা এটিকে ‘আইন পেশার জন্য লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছে এবং দাবি করেছে, আসলে ইসরায়েলই গণহত্যার শিকার।

ইসরায়েল নিয়মিতভাবে অস্বীকার করে আসছে যে তাদের কর্মকাণ্ড গণহত্যা। দেশটির দাবি, এসব পদক্ষেপ আত্মরক্ষার বৈধ উপায়।

আইএজিএস গবেষকরা বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে প্রায় ১,২০০ জন নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মির ঘটনা হওয়া ছিল অপরাধ। তবে ইসরায়ে শুধু হামাসকে লক্ষ্য করেই প্রতিক্রিয়া জানায়নি, বরং পুরো গাজার জনগণেকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।

জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন অনুযায়ী, কোনো জাতি, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত অপরাধই গণহত্যা। এই কনভেনশন নাজি জার্মানির হাতে ইহুদি হত্যাযজ্ঞের পর গৃহীত হয়েছিল।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে দুটি ইসরায়েলি সংগঠনসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা বলেছে, তাদের বিশ্বাস ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে। তবে জাতিসংঘ ও কয়েকটি পশ্চিমা দেশ জানিয়েছে, শুধু আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কেই তারা চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে মেনে নেবে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলা নিয়ে কাজ করছে। ২০২৩ সালে দায়ের করা এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে। আদালত এখনো চূড়ান্ত রায় দেননি এবং ইসরায়েলকে ২০২৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় দিয়েছে।

তবে ইসরায়েল এ মামলাকে ইহুদিবিদ্বেষী হিসেবে অভিহিত করেছে।

তবে আইএজিএস জানিয়েছে, তাদের প্রস্তাব আন্তর্জাতিক আদালতের মামলায় সরাসরি প্রভাব ফেলবে না। 

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *