ছবিঃ ঢাকা ট্রিবিউন
গণমঞ্চ নিউজ ডেস্ক –
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের অন্তত ১৩ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ ফের নদীভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ভদ্রা নদীসংলগ্ন কালিনগর এলাকায় ওয়াপদার বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছরের ২২ আগস্ট একই এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ২২ নম্বর পোল্ডার তলিয়ে গিয়েছিল। তখন কয়েক মাস পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় তাদের। আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে হাজারো মানুষকে রাস্তার পাশে দিন কাটাতে হয়েছিল। এবারও একই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে কালিনগর সাধুঘাট এলাকার অমল কবিরাজের বাড়ি থেকে প্রভাষ মণ্ডলের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৪০০ মিটার বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হওয়ার ভয়ে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, অবিলম্বে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানো এবং টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ জরুরি।
এর প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার স্থানীয়রা বাঁধের ওপর মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুকুমার কবিরাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে সাবেক চেয়ারম্যান সমরেশ হালদার, ইউপি সদস্যরা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বক্তব্য রাখেন। তারা অভিযোগ করেন, প্রতিবার ভাঙনের পর ত্রাণ দেওয়া হলেও টেকসই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় না।
ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সমরেশ হালদার বলেন, “প্রতি বছরই বাঁধে ভাঙন হয়। ফলে লবণপানি ঢুকে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণের কারণে এটি টেকসই হচ্ছে না। স্থায়ী সমাধান দরকার।”
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুকুমার কবিরাজ জানান, “দেলুটি ইউনিয়নের পাঁচটি ওয়ার্ডের ১৩টি গ্রাম নিয়ে গঠিত ২২ নম্বর পোল্ডারে প্রতিবছর কোটি টাকার তরমুজসহ নানা ফসল উৎপাদিত হয়। বাঁধ ভেঙে গেলে এসব কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, “কালিনগরের ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের একটি বৃহৎ প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, গত বছর বাঁধ ভেঙে ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয় এবং প্রায় ১৫ হাজার মানুষ লবণপানিতে বন্দি হয়ে পড়েন। তীব্র স্রোতে মাছের ঘের, মাটির ঘরবাড়ি, ধান ও সবজি ভেসে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কালিনগর, দারুল মল্লিক, হরিণখোলা, সৈয়দখালি, সেনেরবেড়, গোপীপাগলা, খেজুরতলা, তেলিখালী, হাটবাড়ী, ফুলবাড়ি, বিগরদানা, দুর্গাপুর ও নোয়াই গ্রামের মানুষ।
গত দুই দশকে ধারাবাহিক ভাঙনে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি ও অসংখ্য ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এবারও একই এলাকার এক কিলোমিটার দূরে নতুন ভাঙনের আশঙ্কায় তারা চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।