কেরানীগঞ্জে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব: একই পরিবারে ছয়জন আক্রান্ত

ছবিঃ বেপারীপাড়া থেকে ইকুরিয়া বাজার ভাঙাচোরা রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে কৃত্রিম জলাশয়ের সৃষ্টি

মো. এনামুল হাসান, ঢাকা কেরানীগঞ্জ থেকে

ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার ইকুরিয়া এলাকায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ ইকুরিয়া জমিদারবাড়ি গ্রামের একটি পরিবারে একসাথে ছয়জন সদস্য এই মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, গত এক সপ্তাহে ইকুরিয়া গ্রামের প্রায় ১৩জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একই পরিবারের ছয়জন রয়েছেন। এরা হলেন শুভাঢ্যা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ওয়াহেদুজ্জামান (৫৮ বছর), তার স্ত্রী শামসুন্নাহার (৫০ বছর), তার ভাই নুরুজ্জামান (৫২), সাইদুজ্জামান (৫৫), হায়াতুজ্জামান ও হায়াতুজ্জামানের ছেলে হানিফ জামান।

সরেজমিনে ইকুরিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেপারীপাড়া থেকে ইকুরিয়া বাজার পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের কাজ দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। ওই ভাঙাচোরা রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে কৃত্রিম জলাশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকার সুয়ারেজ পাইপলাইন ফেটে গিয়ে পানি রাস্তায় উপচে পড়েছে। জমে থাকা পানিতে কচুরিপানা জন্ম নিয়েছে। সেখানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপও দেখাগেছে।

ইকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ বলেন, এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে নিয়মিত মশা নিধনের জন্য কীটনাশক স্প্রে করা হতো, কিন্তু বর্তমানে সেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে মশা ও মাছির সংখ্যা বেড়েছে।

ওই গ্রামের গৃহিনী ফাতেমা আক্তার বলেন, নির্মাণাধীন সড়কের জমে থাকা পানিতে মশার ডিম দেখা যায়। পানি নিষ্কাশন ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে মশার সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলাকাবাসীর স্বার্থে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা উচিত।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ওয়ার্ড সদস্য ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা মশার প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি তিনি ও তার স্ত্রী উভয়েই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তার স্ত্রী বর্তমানে রাজধানীর একটি বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, যদি জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করা যায় ও কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়, তাহলে এলাকা থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো সম্ভব।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শাহনুর ইসলাম বলেন, গত রোববার রাতে আমাদের হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রত্যন্ত এলাকায় সাধারণত ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। তবে এই এলাকার অনেক রোগী পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাই আমাদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা তুলনামূলক কম। কিন্তু জ্বর, হাত-পা ব্যাথা, বমি ভাব নিয়ে প্রতিদিন অনেক রোগী আমাদের এখানে ভীড় করছে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লায় স্বাস্থ্যকর্মীরা জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ অব্যাহত রেখেছেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসাধারণের বাসস্থানের চারপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *