ইসলামে পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার গুরুত্ব

মাওঃ শামীম হুসাইন কেরানীগঞ্জ থেকে

ইসলাম একটি ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের ধর্ম। এই ধর্ম মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সাহায্য, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রতিষ্ঠার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে। আল্লাহ তা’আলা মানবজাতিকে একটি একক সম্প্রদায় হিসেবে সৃষ্টি করেছেন এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই একটি আদর্শ সমাজ গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বারবার মুমিনদেরকে একে অপরের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।

কুরআনের দৃষ্টিতে সহযোগিতা

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট ভাষায় পারস্পরিক সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “তোমরা সৎ ও তাকওয়ার কাজে পরস্পরকে সাহায্য করো, আর পাপ ও সীমা লঙ্ঘনের কাজে পরস্পরকে সাহায্য করো না।” (সূরা মায়িদা, ৫:২)। এই আয়াতটি ইসলামে সহযোগিতার মূলনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। অর্থাৎ, যেকোনো ভালো কাজ, যা সমাজের কল্যাণ বয়ে আনে, তাতে একে অপরকে সাহায্য করা ইবাদত। কিন্তু অন্যায় ও অসৎ কাজে সহযোগিতা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শে সহযোগিতা

রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি বলেছেন, “এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সে তাকে নির্যাতন করবে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেবে না।” (মুসলিম)। এই হাদিসটি মুসলিমদের মধ্যে একটি দৃঢ় ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে।

রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের একটি বিপদ দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার একটি বড় বিপদ দূর করে দেবেন।” (বুখারি)।

তিনি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপমা দিয়েছেন, “মুমিনগণ একে অপরের জন্য একটি ইমারতের মতো, যার এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে।” (বুখারি)। এই উপমাটি সমাজের প্রতিটি সদস্যকে একে অপরের শক্তি ও সহায়তাকারী হিসেবে তুলে ধরে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা

ইসলামে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার অনেক দিক রয়েছে। যেমন:

 * যাকাত ও সদকা: যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি এবং এটি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান কমানোর একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এর মাধ্যমে সমাজের বিত্তবানেরা তাদের সম্পদের একটি অংশ অভাবী মানুষের মধ্যে বিতরণ করেন। এটি শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, বরং পারস্পরিক সহমর্মিতারও প্রকাশ।

 * পরোপকার: রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তকে সাহায্য করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন।” তিনি আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্যের প্রয়োজন পূরণে কাজ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন।” (বুখারি)। এটি মুসলিমদেরকে ব্যক্তিগত লাভের বাইরে গিয়ে অন্যের কল্যাণে কাজ করার অনুপ্রেরণা দেয়।

সহযোগিতার উপকারিতা

পরস্পর সাহায্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সমাজে অনেক উপকার হয়। এর ফলে:

 * ঐক্য ও সংহতি: সহযোগিতার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বৃদ্ধি পায়। যখন সবাই একে অপরের পাশে দাঁড়ায়, তখন সমাজ একটি পরিবারের মতো শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

 * শান্তি ও নিরাপত্তা: যে সমাজে মানুষ একে অপরের সহায়ক, সেখানে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার সুযোগ কমে যায়। এতে সমাজের প্রতিটি সদস্য নিজেদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত অনুভব করে।

 * আল্লাহর সন্তুষ্টি: পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতা আল্লাহর একটি পছন্দের কাজ। এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় এবং পরকালে এর জন্য মহান পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

ইসলামে পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতা কেবল একটি নৈতিক উপদেশ নয়, বরং একটি অপরিহার্য সামাজিক দায়িত্ব। এটি এমন একটি গুণ, যা একটি সমাজকে স্থিতিশীল, ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ করে তোলে। তাই আমাদের উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই গুণটি চর্চা করা এবং সমাজের প্রতিটি সদস্যের পাশে দাঁড়ানো।

Share this post:

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *